কাটা গাছের গুড়ির উপর দিয়েই সড়ক নির্মাণ!

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করে কাজ করেছে সড়ক বিভাগ। যশোর-মণিরামপুর সড়কে ৩৮ কিলোমিটারের এই কাজ দেড় বছর আগে শেষ হলেও এর স্থায়িত্ব নিয়ে শংকার সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণে দুই পাশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হলেও এগুলোর মূল বা গুড়ি উঠানো হয়নি। কোনো কোনো স্থানে সড়ক ছাপিয়ে গুঁড়িসহ মূল উঁকি দিচ্ছে। আবার কোনো কোনো স্থানে গাছের মূলের সামান্য অংশ ওঠানো হলেও তার ওপরেই পাথর ও বিটুমিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নির্মিত ওই সড়কে গাছ কেটে ফেলা স্থানে ভারি যানবাহনের চাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু হওয়ায় এই শংকা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর-মণিরামপুর সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে দুই পাশের বিভিন্ন স্থানে থাকা গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু গাছ কেটে ফেলা হলেও এর শেকড় পুরোপুরি ওঠানো হয়নি। কোথাও দেখা গেছে, গাছসহ শেকড়ের ওপরেই বিটুমিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় বিটুমিন দেয়া হয়নি। তাকালেই গাছের শেকড়ের ওপরের গুঁড়ি দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো স্থানে গুঁড়ি উঁচু হয়ে থাকায় যানবাহন চলাচলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন একটি গুঁড়ির পাশের একজন মনোহরি দোকানি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তিনি নিজ দায়িত্বে ওই গুঁড়ির সাথে লাল কাপড় উড়িয়ে রেখেছেন। যাতে মানুষ বিপদ সংকেতটি দেখতে পায়। কিন্তু সড়ক বিভাগ এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন। কোনো কোনো স্থানে গাছের শেকড়ের ওপরের অংশের সামান্য উঠিয়ে সেখানে পাথর ও বিটুমিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ভারি যানবাহন সেখান চলাচল করতে গিয়ে দুর্বল কাজের কারণে ওই স্থান বসে যাচ্ছে, ভাঙনের আশঙ্কা প্রবল হয়ে পড়েছে। ফলে ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান জানান, যশোর-মণিরামপুর সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত ছিলো। যশোরের রাজারহাট থেকে ৩৮ কিলোমিটার পর্যন্ত এই সড়কটি ৩৩ ফুট প্রশস্তকরণের জন্যে ৩৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ৪টি প্যাকেজে ঠিকাদারদের মাধ্যমে সড়ক প্রশস্ত ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বাধার সৃষ্টি হয় গাছ।
জেলা পরিষদ দাবি করে, জায়গা ও গাছ তাদের। বিশেষভাবে জেলা পরিষদ গাছের জোরালো দাবি করায় সুষ্ঠুভাবে সড়ক নির্মাণের স্বার্থে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিষয়টি মেনে নেয়। তবে শর্ত ছিলো, সড়ক ও জনপথ বিভাগ যে স্কেলে সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে সেই স্কেলে গাছ কেটে ফেলার স্থানে জেলা পরিষদ কাজ করে দেবে। কিন্তু জেলা পরিষদ সেই স্কেলে কাজ না করে দেয়ার কারণে এই সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটি পরে চোখে পড়ায় তারা জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছেন তাদের স্কেলে কাজ করে দেয়ার জন্যে। কিন্তু জেলা পরিষদ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা পরিষদ অন্তত ৪০টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে। গাছগুলো তাদের বলে দাবি করা হয়েছিলো। তিনি আরো জানান, দেড় বছর আগে ওই সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল জানান, টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদারের মাধ্যমে তারা গাছগুলো কেটেছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ কেটে ফেলা গাছের স্থানে তাদের স্কেলে কাজ করে দেয়ার শর্ত দিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী শর্ত ছিলো তা তার জানা নেই। তার দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন। বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন।