কাটা ব্রয়লারও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে!

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংসও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে গরু ও খাসির মাংসের সাথে ব্রয়লার মুরগির দাম যখন ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন বাজারে কেটে বিক্রি করা মুরগির মাংসের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু হঠাৎ করে বাজারে কাটা মাংসের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৩১০ টাকা হয়েছে।
বুধবার (২২মার্চ )যশোর বড়বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা কেজি দরে। অথচ মাত্র চারদিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পাইকারিভাবে ব্রয়লার মুরগীর দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা বাড়তি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আরও দাম বাড়তে পারে বলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করেন।
বড় বাজারের ব্রয়লার মুরগীর কাটা মাংস বিক্রেতা রাজু ও রফিকুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের মাংসের পাশাপাশি মুরগির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এজন্য অধিকাংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্তশ্রেণীর মানুষের আগ্রহ এখন ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংসের প্রতি। সেকারণে আমাদের দোকানে বিক্রিও বেড়েছে। তবে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় গত দুদিন ধরে প্রতি কেজি কাটা মাংস ৩১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তারা বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা অসন্তুষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কিছু করার নেই আমাদের।
পাশেই কথা হয় মুরগী ব্যবসায়ী নাজমুল হুদার সাথে। তিনি বলেন, গত দুদিনে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। খামার পর্যায়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ টাকা কেজি। আর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। সোনালী খামার পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৩৫ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, লেয়ার খামার পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩১৫ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই সাথে ৪৫০ টাকার দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজি। তিনি বলেন, এমনিতে পাইকার পর্যায়ে দাম বেশি তারপর রোজা এ কারণে বাজার একটু চড়া। সামনে দাম আরও বাড়লে করার কিছুই থাকবেনা বলে তিনি জানান।
বাজারে কথা হয় মুরগি কিনতে আসা যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার শাহিদা বেগম ও রুকসানা আক্তার নামে দুই জনের সাথে। তারা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সংসার খরচ কাটছাট করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা মাংস খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম বললে চলে। মাঝে মধ্যে কাটা ব্রয়লার মুরগীর মাংস কিনে সংসারের চাহিদা মেটালেও এখন সেখানেও বিপত্তি। দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা আর মাংসের স্বাদ নিতে পারবো কিনা তাও বলতে পারছিনা।
রোজিনা বেগম নামে আরও এক ক্রেতা বলেন, কাটা মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার প্রতিবেশী একজনের সাথে শেয়ার করে একটি আস্ত মুরগি কিনে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগীর কেজি যদি ৩শ টাকার উপরে বিক্রি হয় তাহলে আমরা রোজার মাসে কী খেয়ে রোজ রাখবো। এভাবে আর সংসার চলতে পারে না।
যশোরের বড় বাজারের মুরগির পাইকার ব্যবসায়ী এসআর ব্রয়লার হাউজের স্বত্তাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান এই প্রেক্ষাপটে সব চেয়ে বিপর্যয়ে আছে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ, পরিবহণের খরচের সাথে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। যেকারণে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে সব ধরণের মুরগির দাম। তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে আমরাও বিব্রত। কারণ পণ্যে দাম বৃদ্ধি হলে তার চাহিদাও কমে যায়। আর চাহিদা কমে গেলে সরবরাহ কমলে আমাদের সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়।
এদিকে রোজা উপলক্ষে বাজারে প্রায় সবশ্রেণীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বিশেষ করে খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি আইটেমের খেজুরে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। ৪০০ টাকার কেজি দরের কলমি খেজুর বিক্রি ৬০০ টাকা, ৩০০ টাকা কেজির রাবেয়া খেজুর বিক্রি ৪০০ টাকা, ২৫০ টাকা কেজির ডারাজ খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, ৭৫০ টাকার মাজদুল খেজুর ৯৫০ টাকা, ৬০০ টাকা কেজি আমবার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, ৬০০ টাকার আজোয়া খেজুর ৭০০ টাকা, ৪৫০ টাকার সুপরিন মরিয়ম খেজুর ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
একই অবস্থা আপেল, আঙ্গুর, তরমুজসহ অন্যান্য ফলের। এসব ফলের কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
যশোর সার্কিট হাউজের সামনে সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে ফলের দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি মাসুদ আলম জানান, রোজা উপলক্ষে গত ৫ দিন ধরে পাইকার পর্যায়ে বাড়তি দামে ফল বিক্রি হচ্ছে। যেকারণে সেখান থেকে আমাদের বাড়তি দামে ফল কিনে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ নিয়ে ক্রেতারও অসন্তোষ বলে তিনি জানান।