শার্শায় সাড়ে ৩শ বস্তা চাল চুরির মামলায় ডিবির চার্জশিট

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগানের মেসার্স সাদ এন্টারপ্রাইজের প্রায় সাড়ে ৩শ বস্তা চাল চুরির মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। আন্তঃজেলা চোরচক্রের ৭ সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল। ওই প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে কিভাবে চাল চুরি করলো এবং কিভাবে চোরচক্র শনাক্ত হলো সেইসব তথ্য উঠে এসেছে ডিবি পুলিশের তদন্তে।
ডিবি পুলিশের আদালতে দেয়া চার্জশিটভুক্ত চোরচক্রের সদস্যরা হলেন, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার মৃধার ছেলে ইয়াকুব মৃধা, বরগুনার আমতলী উপজেলার কড়ইবুনিয়া গ্রামের মৃত রহিম হাওলাদারের ছেলে রুবেল হাওলাদার, উত্তর ঘোপখালী গ্রামের জয়নাল গাজীর ছেলে মহসিন গাজী, মৃত সুলতান ফকিরের ছেলে ফেরদাউস ফকির, তালতলী উপজেলার হাড়িপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সোহেল, পাবনার আমিনপুর উপজেলার আমিনপুর মদিনা ইটভাটা এলাকার মৃত গফুর সরদারের ছেলে সেলিম ওরফে কেরফা সেলিম ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সামছুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে শফিয়ার রহমান শফি। চার্জশিটে অভিযুক্ত অপর ৪ জন হলেন চোরাই চাল ক্রেতা। এরা হচ্ছেন, পাবনার আমিনপুর উপজেলার চকঘরিয়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম খাঁর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক খাঁ, চরপাড়া সন্নাসী বান্ধা এলাকার আবু তাহের প্রামাণিকের ছেলে রুবেল প্রামাণিক, চরপাড়ার হারু প্রামাণিকের ছেলে হযরত প্রামাণিক ও আমিনপুর বাজার এলাকার মৃত আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে এসএম রফিকুল ইসলাম। চার্জশিটভুক্ত ১১ আসামির মধ্যে সোহেল বাদে অন্যদের বিভিন্ন সময় আটক করে ডিবি পুলিশ। সোহেল পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর আবেদন জানানো হয়েছে চার্জশিটে।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল জানান, শার্শা উপজেলার যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুব আলম বাবলুর দক্ষিণ বুরুজবাগানে আনসার ক্যাম্পের ক্যান্টিনের সামনে মেসার্স সাদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০২২ সালের ১৮ জুলাই রাতে তার ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৪০ বস্তা বিভিন্ন প্রকার চাল, ১ বস্তা মশুরির ডাল ও নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র। এ ঘটনায় শার্শা মামলা হলে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ। এরপর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্দেহভাজন এসব ব্যক্তি পেশাদার চোর। দক্ষিণ বুরুজবাগানের মেসার্স সাদ এন্টারপ্রাইজে চাল চুরির পর শনাক্ত হওয়া চোরচক্রের হোতা ইয়াকুব মৃধাসহ সহযোগী রুবেল হাওলাদার, শফিয়ার রহমান শফি, মহসিন গাজী, ফেরদাউস ফকির রংপুরের তারাগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে আটক হয়েছেন। কারাগারে থাকায় এই ৫ জনকে আদালতের মাধ্যমে চাল চুরির মামলায় আটক এবং পরে রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা চাল চুরির কথা স্বীকার করেন। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাবনার আমিনপুরে অভিযান চালিয়ে চক্রের আরেক সদস্য সেলিম ওরফে কেরফা সেলিমকে আটক করেন। আটকরা আরো জানান যে, তাদের সাথে সোহেল নামে আরো একজন ছিলেন। কিন্তু অভিযান চালানো হলেও সোহেলকে আটক করা যায়নি। এরপর আটক চোরচক্রের সদস্যদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চোরাই চাল ক্রয়ের অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাক, রুবেল প্রামাণিক, হয়রত আলী এবং এস এম রফিকুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৬০ বস্তা চাল, ২২টি খালি বস্তা ও চাল বিক্রির ১ লাখ ১৬ হাজার ২শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার প্রায় ২ মাস আগে খুলনার রেলস্টেশনে বসে যশোরের কোনো একটি দোকান থেকে চুরির পরিকল্পনা করে চোরচক্র। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তারা একটি পিকআপ নিয়ে যশোরের মণিহার এলাকায় আসে এবং পরে সেখান থেকে শার্শার দক্ষিণ বুরুজবাগান এলাকায় যায়। দিনের বেলায় কয়েকটি দোকান দেখার পর মেসার্স সাদ এন্টারপ্রাইজে চুরির সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর রাতে সুযোগ বুঝে সামনে পিকআপ দাঁড় করিয়ে রেখে দোকানের সাটারের তালা ভেঙ্গে তারা চালের বস্তা চুরি করে চোরচক্র। সেখান থেকে ১ বস্তা ডালও চুরি করে। চাল চুরি শেষে তারা পিকআপ নিয়ে পাবনায় চলে যায়। তিনি বলেন, এই চোরচক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে এভাবে গাড়ি নিয়ে গিয়ে দোকান থেকে চুরি করে থাকেন।