হঠাৎ টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ

0

আকরামুজ্জামান॥ সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি কর্মসূচি কোনো ঘোষণা ছাড়াই যশোরে হঠাৎ বন্ধ রয়েছে। জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে ৫ উপজেলায় গত জানুয়ারি মাসের বরাদ্দ হওয়া টিসিবির পণ্য ডিলাররা তুলতে পারলেও এখনো পর্যন্ত তিনটি উপজেলার জন্য বরাদ্দ হওয়া পণ্য তুলতে পারেনি ডিলাররা।
এই তিনটি উপজেলা হচ্ছে যশোর সদর, মণিরামপুর উপজেলা ও শার্শা উপজেলা। গত জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখে ফেব্রুয়ারি মাসের মালামাল উত্তোলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত থাকলেও এখনো পর্যন্ত ৮ উপজেলার কোনো ডিলার টিসিবির পণ্য তুলতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে টিসিবি পণ্য তালিকায় অন্যসব পণ্য মজুত থাকলেও শুধুমাত্র চিনির অভাবে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শাক-সবজি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ সবকিছুই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে টিসিবি পণ্য বিক্রি অনিশচয়তার মুখে পড়ায় রীতিমত অসহায় হয়ে পড়েছেন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ম আয়ের মানুষগুলো। এ অবস্থায় সামনে রোজার মাসেও পরিস্থিতি আরও সংকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ডিলাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক ৬০ টাকা দরে এক কেজি চিনি, ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল ও ৭০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুরির ডাল বিক্রি করার কর্মসূচি সারাদেশের মতো যশোরেও চালু রয়েছে। জেলার ৭৩ জন ডিলার এসব মালামাল তুলে নির্দিষ্ট কার্ডধারীদের মাঝে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করে আসছে। যশোরের আট উপজেলায় এর সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯১ জন।
এ বিষয়ে যশোর জেলা টিসিবি পণ্য বিক্রয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেসার্স মাহফুজ ট্রেডিংয়ের স্বত্তাধিকারী মাহফুজুর রহমান বলেন, যশোর জেলায় এখনো পর্যন্ত জানুয়ারি মাসের টিসিবির পণ্য শতভাগ বিক্রি সম্ভব হয়নি। জেলার গুরুত্বপূর্ণ যশোর সদর উপজেলাসহ মণিরামপুর ও শার্শা উপজেলায় জানুয়ারি মাসের কোনো মাল এখনো তুলতে পারেননি ডিলাররা। তিনি বলেন, জানুয়ারির ৩০ তারিখে ফেব্রুয়ারি মাসের মালামাল তোলার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত তা তুলতে পারিনি আমরা। ঝিনাইদহের টিসিবির গোডাউন থেকে বলা হয়েছে চিনির ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আপাতত কোনো মাল তুলতে পারবে না ডিলাররা। তিনি বলেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যদি এমন হয় তাহলে সামনে রোজার মাসে কী পরিস্থিতি হয় তা নিয়ে রীতিমত হতাশ হচ্ছি।
প্রায় একই কথা বলেন, টিসিবির অন্যতম ডিলার যশোর শহরের হাটখোলা রোডের মেসার্স লোকনাথ ভান্ডার এর স্বত্ত্বাধিকারী গৌরাঙ্গ পাল বাবু। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের টিসিবির মালের জন্য ঝিনাইদহের টিসিবির গোডাউনে যোগাযোগ করা হলেও সেখান থেকে কখন দেয়া হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা। এ অবস্থায় আমরা ডিলারাও এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছি।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের টিসিবি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, গত জানুয়ারি মাসের জন্য যশোরের ৮ উপজেলার মধ্যে ৫ উপজেলার বরাদ্দকৃত নির্ধারিত পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হলেও শেষ পর্যন্ত চিনির অভাবে জেলার সদর উপজেলা, মণিরামপুর উপজেলা ও শার্শা উপজেলার বরাদ্দ হওয়া পণ্য দেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, নির্ধারিত পণ্যের মধ্যে তেল ও ডালের মজুদ থাকলেও শুধুমাত্র চিনির কারণে দিতে পারছিনা। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চিনির বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত আসলেই আমরা আবার পুরোদমে টিসিবির কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।
এদিকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম যখন চরম পর্যায়ে বেড়ে চলেছে। মানুষের সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠেছে ঠিক তখনি টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকায় নি¤œ আয়ের মানুষতো বটে, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মাঝেও চরম হতাশা নেমে এসেছে। তাদের দাবি শত প্রতিকূলতার মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে তারা সামান্য কিছু পণ্যে কিণেও সংসারের খরচ কমাতে পারলেও সে সুযোগ থেকে তারা রীতিমত বঞ্চিত হতে চলেছে। শহরের শংকরপুর এলাকার ইদ্রিস আলী বলেন, গত কয়েক মাস ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির মাল কিনে কিছুটা সংসারের খরচ সাশ্রয় করে আসছিলাম। এখন কঠিন সময়ে সে সুযোগ হয়তো আর থাকছেনা। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ডিলার পয়েন্টে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি কিন্তু কবে নাগাদ বিক্রি করবে তা বলছেন না।
একই কথা বলেন, উপশহর এলাকার শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার ৭ সদস্যর সংসার চালাতে চরম হিমশিম খাচ্ছি। মাঝেমধ্যে টিসিবির মাল কিনে কিছুটা সংসারের খরচ সাশ্রয় করতাম। এখন শুনছি আর বিক্রি হবেনা। এ অবস্থায় সামনে কীভাবে সংসার চলবে সে চিন্তায় ঘুম আসছেনা। তিনি বলেন, সামনে রোজার মাসে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। তাই সরকারের উচিৎ এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান করা।