বেনাপোল স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ৩০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা

0

কামাল হোসেন, বেনাপোল॥ বেনাপোল স্থলবন্দরে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ৩০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা বলে কাস্টমস সূত্র জানায়।
৬ মাসে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৩০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা ।
কাস্টমস ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ও শিল্প কারখানার কিছু পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিলো ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিলো ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। আমদানি কম হয়েছিলো ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। গেলো বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ৫৫৮ কোটি টাকা ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছিলো। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিলো ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিলো ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

২০১৯-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিলো ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয় ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ মেট্রিক টন ।
পণ্য আমদানি কমেছে ৫৫ হাজার ৭৭১ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন। গত বছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) আমদানি হয়েছিলো ১৭ লাখ ১১ হাজার ৬ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন পণ্য। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মাসে আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ দশমিক ৫৩ মেট্রিক টন পণ্য।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমের কারণে রাজস্বও আদায় কম হয়েছে।

ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরচালক মতিয়ার রহমান জানান, বর্তমানে বেনাপোলসহ যশোরের কোন ব্যাংক এলসি খুলছে না। যে কারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। পণ্য আনতে না পারার কারণে বিক্রি কমে গেছে। ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যে কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে।
যশোর ইউসি ব্যাংকের ম্যানেজার আব্দুল কাদের জানান, উচ্চ মার্জিনের কারণে সব ব্যাংকে এলসি কমেছে। ডলার সংকট কেটে গেলে আমদানি সহজ হয়ে আসবে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের বেনাপোল শাখার ব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান জানান, ডলার সংকটে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি খুলছে না। আর এলসি করতে না পারলে পণ্য আমদানি কিভাবে করবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সাথে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে দূরাবস্থায় রয়েছেন। এখন আমদানিকারকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। একেতো বাণিজ্য ভালো নেই, তার উপর পণ্য আমদানি করতে না পারলে আমদানির সাথে জড়িতরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে। এছাড়াও কাস্টমসের নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়মনের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার জানান, ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছে না। যে কারণে গত ৬ মাসে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। এখানে কোন হয়রানি হয় না বলে তিনি দাবি করেছেন।