বই সংকট : পাঠদানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা

0

 

আকরামুজ্জামান॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌছে দেয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত যশোরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৪০ শতাংশ বই আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা পুরনো বই সংগ্রহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পুরনো বই সংগ্রহ করে পড়ার কেনো সুযোগও নেই । কারন নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী তাদের বই একেবারেই পাল্টে গেছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা আপাতত পুরাতন বই দিয়ে পাঠদান স্বাভাবিক রাখলেও নতুন বইয়ের প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় কারিগরি ও মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের সংখ্যা রয়েছে ৫২২ টি। আর মাদ্রাসা রয়েছে ৩১০ টি। সব মিলিয়ে জেলায় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ১২ হাজার ৭শর কিছু বেশি। গত বুধবার পর্যন্ত জেলায় সব মিলিয়ে মাধ্যমিক স্তরের বই এসেছে চাহিদার ৬০ শতাংশ। তবে প্রতিদিনই কোনো কোনো বই আসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে জেলা প্রাথমিকি শক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রাথমিকে বইয়ের চাহিদা দেয়া হয় ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ১১০ টি। বুধবার পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৮ লাখ ২৭ হাজার ৪শ ৪৬ টি বই। যা চাহিদার ৬১.৩৭ শতাংশ বলে জানাগেছে।
এদিকে নতুন বছরের শিক্ষাবর্ষের এক মাস পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই না আসায় এ নিয়ে চরম হতাশ হচ্ছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। যশোর সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখনও পর্যন্ত ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শতভাগ বই হাতে পায়নি।
যশোর সদরের ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ জানা গেছে, বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৮ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৬৬ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৬৮ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৭৯ জনএবং পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০১ জন। সেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত এই তিনটি বইই শিক্ষার্থীরা পেলেও তৃতীয় শ্রেণির ৬ টি বইয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা পেয়েছে ৩টি। এ তিনটি বই হলো ইংরেজি, বিজ্ঞান ও ধর্ম। এখনো গণিত, বাংলা এবং বাংলাদেশ ও বি পরিচয় বই শিক্ষার্থীরা পায়নি। ৪র্থ শ্রেণির ৬ টি বইয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং ধর্ম বই পেলেও এখনো বাংলা, গণিত এবং বিজ্ঞান পায়নি তারা। ৫ম শ্রেণিতে ৬ টি বইয়ের মধ্যে ইংরেজি এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় নামে দুটি বই পেলেও বাকি ৪ টি বই বাংলা, গণিত,ধর্ম এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান এখনো পায়নি।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক তিলোত্তমা বানু বললেন, সব বই না পাওয়ায় পাঠদানে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে পুরাতন বই সংগ্রহ করে পড়ানোর চেষ্টা করছি। নতুন বই খুব দ্রুত চলে আসবে বলে তিনি দাবি করেন।
পাশেই মুক্তেশ্বরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ১০ টি বইয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত পেয়েছে মাত্র ৩ টি বই। সেগুলো হলো, বাংলা, ডিজিটাল প্রযু্িক্ত এবংশিল্প ও সংস্কৃতি। বাকি ইংরেজি, গণিত, ধর্ম, বিজ্ঞান, জীবন জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এখনো হাতে এসে পৌছেনি। তবে ওই বিদ্যালয়ের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির ১৪ টি বইই শিক্ষার্থীরা পেয়েছে বলে জানাগেছে।
ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাস নেন সিনিয়র শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম। এ ব্যাপারে তিনি বলেন,‘যেহেতু নতুন কারিকুলাম, তাই নতুন বই পেলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে সুবিধার পাশাপাশি সরকারের নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন সহজ হবে। সব বই না পাওয়ায় স্বাভাবিক পাঠদানে কিছুটা সমস্যা হলেও খুব দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে নতুন বই হাতে না পাওয়ার পাশাপাশি পুরো কারিকুলাম পরিবর্তন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। সদর উপজেলার ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায় নতুন বছরে নতুন ক্লাসে তারা বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং ইংরেজি এই বই দুটি পেয়েছে। বাকি ৪টি নতুন বই এখনো পায়নি তারা। এ কারনে গত বছরের পুরাতন বই সংগ্রহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে তারা বলে জানায়।
তবে, তারা পুরাতন বই দিয়ে আপাতত চালিয়ে নিতে পারলেও পুরাতন বই দিয়ে লেখাপড়া চালাতে পারছেনা ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। মুক্তেশ্বরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোঃ আব্দুর রহমান জানায় পুরো বই পরিবর্তন হওয়ায় তারা এখনো ৪ টি বিষয়ে কোনো ক্লাসে বসতে পারেনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, ঢাকা থেকে প্রতিদিনই ঘাটতি বই যশোরে আসছে। এসব বই সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ফলে কোন বই কয়টি এসেছে তা বলা কঠিন। তবে বই যখনই আসছে আমরা বিতরণ করছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব বই দেয়া সম্ভব হবে এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কোনো সমস্যা হবেনা।