যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন স্থগিত !

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও ঝুলে গেলো যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন। দীর্ঘ আট বছর পর উৎসব মূখর পরিবেশে যশোরের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ সংগঠনের নির্বাচনের আয়োজন করা হলেও আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে ভোটগ্রহণের মাত্র দুই দিন আগে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে গঠিত নির্বাচন বোর্ড। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বৈঠকে বসে সাড়ে চার ঘণ্টা যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি নির্বাচন বোর্ডের আহবায়ক সিনিয়র সহকারী কমিশনার কে. এম. আবু নওশাদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
দেশের সর্বপ্রাচীনতম এ জেলার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টির নির্বাচন নিয়ে বারবার এ অচলাবস্থায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। নির্বাচনের পক্ষে সোচ্চার থাকা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা বিষয়টি সুবিধাভোগী কুচক্রী মহলের গভীর ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে তারা দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনের। নির্বাচনে দুইটি প্যানেলে প্রার্থীরা অংশ নিয়ে এ কদিন ধরে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। এরমধ্যে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের নেতৃত্ব দেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি আলহাজ মিজানুর রহমান খান ও অপর প্যানেল ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন হুমায়ুন কবির কবু। প্রার্থীরা যখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ঠিক সেই সময়ে দুই দিন আগে বুধবার মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান নামে একজন ভোটার নির্বাচনে ভোটার তালিকার অনিয়ম এনে আদালতে নির্বাচন বোর্ডের বিরুদ্ধে পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের প্রেক্ষিতে যশোরের সিনিয়র সহকারী জজ সুজাতা আমিন স্থিতাবস্থা বজায় রেখে বিবাদীদের এক কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে শুনানিতে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন।
এদিকে ভোটগ্রহণের মাত্র দুইদিন আগে আদালতের এমন একটি আদেশে হতাশ হন যশোরের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন সোচ্চার থাকা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা আদালতের সিদ্ধান্ত জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট আদালতে যান। কিন্তু আদালতের আদেশ বিবাদী চেম্বার অব কমার্সের বর্তমান প্রশাসক ও নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে না পৌঁছানোর কারণে এদিন কোনো শুনানি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তারা বিকেল চারটায় যশোর কালেক্টরেট ভবনে গিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে বিষয়টির সুরাহার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের অন্যতম প্রার্থী যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আলহাজ মিজানুর রহমান খান বলেন, শনিবার নির্ধারিত তারিখেই যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার জন্য আমরা বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টার দিকে যশোর কালেক্টরেটে গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের সাথে দেখা করে সার্বিক বিষয় তুলে ধরি। এসময় জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে আইনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন বলে মিজানুর রহমান খান জানান। পরে চেম্বারের বর্তমান প্রশাসক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন।
মিজানুর রহমান খান বলেন, যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ বৈঠক চলাকালে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সকল প্রার্থীরা অপেক্ষায় ছিলাম। প্রায় চার ঘণ্টা সেখানে অপেক্ষার পর রাত ৮টার কিছু পর আমাদেরকে নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি অবহিত করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার কেএম আবু নওশাদ। তিনি বলেন, চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন নিয়ে এ ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নিতে পারিনা। এর জন্য প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হবেন বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক কেএম আবু নওশাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আদালতের আদেশটি আমরা বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতে পেয়েছি। এরপর এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাই শেষে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদের অভিযোগ নির্বাচনের পরাজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের কতিপয় প্রার্থী ষড়যন্ত্র করে আদালতের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে ষড়যন্ত্র যাই হোকনা কেনো নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারা সর্বোচ্চ আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানান। তবে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন, ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের অন্যতম প্রার্থী হুমায়ূন কবির কবু। তিনি বলেন, নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাক এটি আমরা কামনা করিনা। আমরা চাই নির্বাচন হোক, ভোটাররা তাদের যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যিনি আদালতে মামলা করেছেন তিনি আমাদের ঘনিষ্টজন বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এটি ঠিক না। যিনি মামলা করেছেন তাকে তিনি চেনেন না বলে জানান।