চৌগাছায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে গম চাষ

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার কৃষকরা এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গমের চাষ করেছেন। বাজারে আটা ময়দার দাম বেশি হওয়ায় গমের যথেষ্ঠ চাহিদা। সে কারণে কৃষক অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে কৃষিপণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চৌগাছায় ১৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যন্ত ২১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে গমের চাষ করেছেন কৃষক। গত কয়েক বছর ধরে ভাইরাসে গমের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। যার কারণে গম চাষ হতে মুখ ফিরিয়ে নেন চাষিরা। তবে এ বছর ভাইরাস প্রতিরোধ ও অধিক ফলনশীল জাতের গম বীজ কৃষকের মাঝে বিতরণ করায় গম চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন চাষিরা।
উপজেলার সুখপুকুরিয়া ও স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অন্য যে কোন বছরের তুলনায় চাষিরা গমের সন্তোষজনক চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি জমিতে গমের চারা বের হয়ে সমুদয় জমি সবুজে ঢেকে গেছে। যেসব জমিতে সেচ প্রয়োজন সেখানে সেচ দেয়া আবার যে সব জমিতে আগাছা নিধনের প্রয়োজন সেখানে আগাছা পরিস্কারসহ নানা কাজে ব্যস্ত কৃষক। উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা নওদাপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ওই গ্রামের মৃত সামছুল বিশ্বাসের ছেলে কৃষক আব্দুল লতিফ বিশ্বাস গম ক্ষেত পরিচর্জায় ব্যস্ত। কথা হয় ওই কৃষকের সাথে। তিনি বলেন, অন্য যে কোন বছরের চেয়ে এ বছর মাঠে গমের চাষ কিছুটা বেশি হয়েছে। বাজারে গমের চাহিদা ভালো। তাই অধিক লাভের আশায় তারা গমের চাষ করেছেন। কিন্তু নানা ধরনের আশংকাও আছে কৃষকের মাঝে। চাষিরা বলেন, প্রতিটি ফসল উৎপাদনের সময় কৃষক আকাশসম স্বপ্ন দেখেন। মাথার ঘাম পেয়ে ফেলে উৎপাদিত ফসল যখনই ঘরে আসে তখন বাজার নিন্মমুখি হয়ে যায়। অভাবের কারণে ইচ্ছা থাকলেও ওই ফসল ঘরে রাখা সম্ভব হয়না। কম দামে ফসল বিক্রির পরপরই দেখা যায় তার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষি। আর লাভবান হচ্ছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এছাড়া বর্তমানে প্রতিটি কৃষি উপকরণের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতো খরচ খরচা করে যদি ফসল পানির দরে বিক্রি করতে হয় তখন কষ্টের শেষ থাকেনা। কৃষক আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের মত ওই মাঠে সামাউল ইসলাম ১ বিঘা, টিটোন হোসেন ১০ কাটা, শরিফুল ইসলাম ১ বিঘা, হবিবর রহমান ১বিঘাসহ অনেক চাষিই গম চাষ করেছেন।
কৃষকরা জানান, এমন এক সময় ছিল যখন মাঠের পর মাঠ গমের আবাদ হয়েছে। গম চাষে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয়েছে বাজারে সে সময়ে কাংখিত দাম পাওয়া যায়নি। যার কারণে কৃষক গমের চাষ হতে মুখ ফিরিয়ে অন্য ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হয়ে উঠে। এছাড়া গত কয়েক বছরে ভাইরাসের কারণে কৃষক গম চাষ করে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছরে কৃষি অফিস উচ্চ ফলনশীল ও ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ প্রদান করায় চাষ বেড়েছে বলে তারা মনে করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, উপজেলার দু’একটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা ব্যতীত অধিকাংশ ইউনিয়নে কমবেশি গম চাষ হয়। তবে স্বরুপদাহ, সুখপুকুরিয়া, হাকিমপুর, পাতিবিলা, জগদীশপুর ইউনিয়নে তুলনা মুলক বেশি গমের চাষ হয়। বিগত বছরে নানা কারণে গম চাষে কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে চলতি মৌসুমে বারী-৩৩, ৩০ ও ৩২ জাতের গম বীজ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এটি উচ্চ ফলনশীল ও ভাইরাস প্রতিরোধ সক্ষমতা বেশি। আমি আশাবাদি প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে চাষি গম চাষে লাভবান হবেন।