১৫ বছর পড়ে থাকার পর বাতিল ঝিনাইদহের খাবার স্যালাইন প্রকল্প

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ॥ নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পড়ে থাকার পর ঝিনাইদহ ওরাল স্যালাইন কারখানা আর চালু হচ্ছে না। এই প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এদিকে এর আগে ট্রমা হাসপাতালেরও বরাদ্দ বাতিল হয়েছে। এ নিয়ে জেলাবাসীর মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দায়ি করা হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বকে।  জেলার সচেতন মহল বলছেন, মানুষ চেয়ে পায়না, আর দুই দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা মরহুম মশিউর রহমানের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারের কাছে তদবিরের অভাবে তা বাতিল হয়ে গেলো।  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ শহরের মদনমোহন পাড়ার পুরানো হাসপাতালের পাশে ওরাল স্যালাইন কারখানার নির্মাণ কাজা শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০০৭ সালে। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর কর হয়। কথা ছিল এ কারখানার তৈরি স্যলাইন আশেপাশের জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কোন লোকবল নিয়োগ হয়নি। সরবরাহ করা হয়নি স্যালাইন তৈরির যন্ত্রপাতি।  প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদার জাহিদ হোসেন জানান, স্যালাইন ফ্যাক্টরি নির্মাণে ৯২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে ভবনটি পড়ে আছে। তিনি বলেন, পরবর্তীতে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা একটু তৎপর হলেই প্রতিষ্ঠানটি চালু করা সম্ভব হতো।  জেলার মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, অনেক টাকা ব্যয়ে এ স্যালাইন ফ্যাক্টরিটি নির্মাণ করা হয়। এটি দীর্ঘদিন যাবত পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে নির্মাণের উদ্দেশ্য। তিনি এই প্রকল্পটি বাতিল না করে চালুর দাবি করেন।
জেলার সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, অনেক আগে স্যালাইন ফ্যাক্টরিটি নির্মাণ করা হয়। লোকবল ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করায় চালু হয়নি।  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, যশোরে একটি স্যালাইন কারখানা আছে। সে কারণে পাশের জেলা ঝিনাইদহে আরেকটি ওরাল স্যালাইন কারখানা চালুর যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করছেন না কর্তৃপক্ষ। আর ভবনটি অন্যভাবে ব্যবহারের কথা চিন্তা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া ঝিনাইদহ দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হওয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মশিউর রহমান জেলায় একটি ট্রমা সেন্টারের বরাদ্দ নিয়ে আসেন। কিন্তু জমি অধিগ্রহনে জটিলতা থাকায় সেটিও বাতিল হয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ার সুবাদে বিএনপির সাবেক এমপি সদ্য প্রয়াত মশিউর রহমান ঝিনাইদহ শহরে শিশু হাসপাতাল, ডয়াবেটিক হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল, খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরি, ট্রমা হাসপাতাল, হরিণাকুন্ডুতে বিএসসি নার্সিং ট্রেনিং কেন্দ্র, করোনারি কেয়ার ইউনিট, নার্সিং ইন্সটিটিউট, ম্যাটস, ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, মুক ও বধির স্কুল, পলিটেকটিক ইন্সটিটিউট, বিআরটিএ ট্রেনিং সেন্টার, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, কৃষি ইন্সটিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ অসংখ্য সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে নজীর সৃষ্টি করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতির অভিাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। এর মধ্যে জেলাবাসীর জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরি ও ট্রমা হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প বাতিল হয়ে গেছে।