জনগণকে প্রজা মনে করে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার ভয় পেয়ে গেছে। ১০ ডিসেম্বরকে ভয় পেয়ে গেছে। আমরা এর আগেও নয়াপল্টনে সমাবেশ করেছি। অনেকবার করেছি। এখন তাদের সমস্যা হচ্ছে কেন?
শনিবার রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
তিনি বলেন, এবার হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই নিরপেক্ষ সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আবার নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে সমস্ত দল অংশ নেবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইনশাল্লাহ একটি পার্লামেন্ট গঠন হবে। যেই পার্লামেন্টে সব আন্দোলনকারী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। সেই জাতীয় সরকার নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা, নতুন দিগন্ত সূচনা করবে। দেশের যত কিছু অসামঞ্জস্য আছে, সমস্যা আছে সেগুলোকে নির্ধারণ করে তারা নতুন করে অর্থনীতিকে সজীব করে তুলবে। রাজনৈতিক কাঠামোকে সজীব করে তুলবে। এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ। দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশস্থলে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে বিকেল চারটার দিকে বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি মহাসচিব। প্রায় আধা ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করেন।
সমাবেশের শুরুতে মির্জা ফখররুল ইসলাম আলমগীর আগত নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, গত তিনদিন ধরে এই আপনাদের মাথার ওপরে ছাউনি ছিল না। এই শীতের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস আপনাদের গায়ে লেগেছে । তারপরও আপনারা থেকেছেন। চিড়া মুড়ি খেয়ে আপনারা এখান থেকে সরেননি।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৬ দিন হরতাল করেছে। ওই সময় বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন দিয়ে একটা বাসেই ১১ জনকে মেরে ফেলেছে। এরকম অসংখ্য হত্যাকান্ড তারা করেছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫টা র্নিবাচন হয়ে গেল। সবাই খুশি যে, এবার অন্তত ব্যবস্থা হয়েছে যে মানুষ তার ভোট নিজে দিতে পারবে। যাকে খুশি তাকে দিতে পারবে। এরা ক্ষমতায় আসার পর সেই ব্যবস্থা পাল্টে দিলো। তারা বুঝলো যে জনগণ তাদের পছন্দ করছে না। তখন তারা সেটিকে বদল করে দিয়ে আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা নিয়ে আসলো। আমরা পরিস্কার করে বলেছি যে, আমরা সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে আবার চাই। নিরোপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অযথা এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। খুব ঢোল পিটাচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যেই সংবিধান তোমাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রয়োজন মতো। তোমাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রের লেবাস দিয়ে রাখার জন্য তোমরা বারবার কাটাছেঁড়া করেছো সেই সংবিধান। যেই সংবিধানে তোমরা তিনটা অনুচ্ছেদ রেখেছো যে অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলা যাবে না। সেই সংবিধান?
ডিজিটাল আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোন দেশ? দাবি করো যে গণতান্ত্রিক দেশ। যে দেশে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা যাবে না, যে দেশে মন্ত্রীদের সমালোচনা করা যাবে না, যে দেশে সরকার খারাপ কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না? এই দেশের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করিনি। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য একটাই, যেমন করে পারো বন্দুক পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকা। আর জনগণকে তারা মনে করে তারা তাদের প্রজা। আমরা কি তাদের প্রজা? এই দেশ আমাদের এই দেশ মানুষের।ফখরুল বলেন, এই সরকার ভয় পাচ্ছে। এই যে আপনারা সমাবেশে এত মানুষ আসছেন। তারা ভাবছে বিএনপিকে এত পেটাই, এত মামলা করি, এত জেলে দিই, এত হত্যা করি, খুন করি তারপরও এত মানুষ আসে কোত্থেকে? আমরা বলেছি ঢাকায় আমাদের পার্টি অফিসের সামনে নয়াপল্টনে এই সমাবেশটা করতে চাই। ওদের ঘুম নেই। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। চোরের মন পুলিশ-পুলিশ এরকম অবস্থা ওদের। নিজেদের ওপরেই আস্থা নেই। কিছু হলেই দুঃস্বপ্ন দেখে বিএনপি আইলো-বিএনপি আইলো, তারেক রহমান আইলো-তারেক রহমান আইলো। আমরা নয়াপল্টনের সামনেই বরাবর সমাবেশ করে এসেছি। বিভাগীয় সমাবেশ করেছি, জাতীয় সমাবেশ করেছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে সমাবেশ করেছি। কোনদিন তো কোনো সমস্যা হয়নি। আজকে হঠাৎ করে আপনাদের মাথায় সমস্যা আসছে কেন? তারা জানেন অনেক খারাপ কাজ করেছেন এই জন্যই সমস্যা। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুর ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুল প্রমুখ।