দুর্নীতির বিচার হয় না ঝিনাইদহে

0

 

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহের বিভিন্ন সরকারি ও নানা দপ্তরে বেশুমার লুটপাট ধরা পড়লেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। বিগত বছরগুলোতে ঝিনাইদহের বেশ কয়েকটি দপ্তরে কোটি কোটি টাকা লোপাট হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য ও প্রমাণ মিলেছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক শাখায় দুই কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়। কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক কৃষকের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ও মৃত ব্যক্তিদের নামে ঋণ উঠিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপক শৈলেন কুমার বিশ্বাস, ক্রেডিট অফিসার আব্দুস সালাম ও মাঠ সহকারী আজির আলীকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবানীপুর জনতা ব্যাংকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এনআইডি ব্যবহার করে ওই এলাকার শতাধিক কৃষকের নামে ভৌতিক ঋণ দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। গত সেপ্টম্বর মাসে জনতা ব্যাংকের হেড অফিস থেকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সরজমিন তদন্ত করে ঋণ জালিয়াতির সত্যতা পান। তবে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির পরিবর্তে বদলি করা হয়। ভবানীপুর ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা ইউনুস আলী ও রুরাল ক্রেডিট অফিসার আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। ব্যাংকের এই বেহাল দশার পর ঝিনাইদহ পৌরসভা ও শৈলকুপা পৌরসভায় ঘটেছে অর্থ তছরুপের ঘটনা। ঝিনাইদহ পৌরসভায় চেক জালিয়াতি করে ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রমাণ পান ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ইয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রণালয়ে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে এ ঘটনায় সাবেক পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আজমল হোসেন ও হিসাবরক্ষক মকলেচুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। ঝিনাইদহ পৌরসভার চেক জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতে শৈলকুপা পৌরসভায় ৫ বছরে পৌর কর ফান্ডে জমা না দিয়ে ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে কর আদায়কারী সাজ্জাদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এভাবে ঝিনাইদহের বিভিন্ন সরকারি ও অন্যান্য দপ্তরে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা চলমান থাকলেও ধরা পড়ার নজির খুবই কম। তদন্ত করলে অনেক সরকারি দপ্তরে লুটপাটের ভয়াবহ তথ্য মিলতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির ঝিনাইদহ সভাপতি অধ্যক্ষ সায়েদুল আলম বলেন, মূলত যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয় না। তাই অনেক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজরা মনে করে সরকারি টাকা লোপাট করলে পার পাওয়া যায়। তিনি বলেন, প্রশাসনিক তৎপরতা পারে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সহসভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, পকেট আছে, পকেট মারও আছে। যতদিন চুরির সুযোগ থাকবে, ততদিন চুরিও থাকবে। তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করেন, তারা তো একা করেন না। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই দুর্নীতি করেন বলে শাস্তি সাজা হয় না। সিস্টেম ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দেশে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব বলে আমিনুর রহমান টুকু মনে করেন।