চিনির বাজারে অরাজকতা যেমন দাম তেমন সংকট

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ চিনির বাজারে রীতিমত অরাজক পরিস্থিতি চলছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি খোলা চিনিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। যশোরের বাজারগুলোতে গুটি কয়েক দোকানে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি একেবারেই উধাও হয়ে গেছে। খুচরো ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিক ও ডিলারদের কারসাজিতে চিনির দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। আর ডিলাররা এ পরিস্থিতির জন্যে পুরোটায় মিল মালিকদের দুষছেন।
রবিবার বিকেলে যশোর বড়বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারের খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানেই কোনো চিনি নেই। কিছু দোকানে দোকানে খোলা চিনি থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজিতে। অথচ এই চিনি মাত্র দুদিন আগে বিক্রি হয়েছিলো ১০০ টাকা। আর এক সপ্তাহ আগে ৯০-৯৫ টাকা।
খুচরো ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা পাইকারি দোকান থেকে বাড়তি দামে চিনি কিনেছেন। সে হিসেবে প্রতি কেজি চিনি পরিবহন, শ্রমিক খরচ দিয়ে দোকানে তুলতে দাম দাঁড়াচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকা। সেই হিসেবে কেজিপ্রতি ১১০ টাকা বিক্রি না করলে তারা পুঁজি রক্ষা করতে পারবেন না।
যশোর শহরের গোহাটা রোডে পবিত্র ভান্ডার নামে মুদি দোকানের স্বত্বাধিকারী পবিত্র পাল বলেন, নিত্যপণ্যের দাম কখন কোনটি বাড়ছে তা নিয়ে তারা রীতিমত বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ডিলার পয়েন্ট থেকে যে দামে চিনি কিনে আনছি সে হিসেবে সরকারি মূল্যের চেয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা কেজিতে বাড়তি কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চিনি বিক্রি করে লাভতো দূরের কথা আসল রক্ষা করারও সম্ভব হচ্ছে না।
পিকে স্টোরের স্বত্বাধিকারী প্রকাশ চন্দ্র দাস বলেন, গত কয়েকদিন ধরে চিনির দাম বেড়েই চলেছে। পাইকারিভাবে আজ ৫০ কেজি ইগলু চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ১০১ টাকা। আর তীর কোম্পানির চিনি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাকজার ১শ’ টাকা। সে হিসেবে কেজি প্রতি দাম পড়ছে ১০২ টাকা। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে যে হারে চিনির চাহিদা রয়েছে সে হিসেবে ডিলাররা আমাদের চিনি দিতে পারছেন না। আরও বলেন, বাজারে যে পরিমাণ চিনি থাকার কথা তা নেই।
তবে চিনির বাজারের এ অরাজক পরিস্থিতির জন্য মিল মালিকদের সরাসরি দায়ী করেছেন ডিলাররা। এ বিষয়ে যশোর শহরের গোহাটা রোডের হাজির আলী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মুস্তাক আহমেদ বলেন, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, আগে মিল থেকে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার গাড়ি চিনি সরবরাহ করলেও এখন তার অর্ধেক গাড়ি চিনিও সরবরাহ করা হচ্ছেনা। যে কারণে আমাদের কাছে চিনি নেই বললে চলে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিল থেকে যে পরিমাণ চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যশোরের বাজারে চিনি পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তবে ক্রেতারা বলছেন, জনগণকে জিম্মি করে ব্যবসায়ীরা খেলায় মেতেছেন। তারা সরকারের কোনো নিয়ম-নীতি মানছেন না। নিজেদের ইচ্ছা মতো দাম বাড়াচ্ছেন। অপরদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো অভিযানও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বড়বাজারে কথা হয় শরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, গত পরশু এই বাজার থেকে আমার এক প্রতিবেশী এক কেজি চিনি কিনেছেন ৯৮ টাকায়। আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে। অথচ দুই সপ্তাহ আগে এই চিনি ৯৫-৯৬ টাকা বিক্রি হয়। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় চিনির বাজার নিয়ন্ত্রক জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা হলেও যশোরের এমন কোনো চিত্র দেখা যাচ্ছেনা। যে কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে যশোরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (বাজার কর্মকর্তা) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা শনিবার থেকে মাঠে নেমেছি। এরমধ্যে রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে যশোরের ছোট ছোট কয়েকটি বাজারে অভিযান চালানা হয়েছে। এ সময়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোট ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা হবে বলে তিনি জানান।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.ওয়ালিদ বিন হাবিবের বক্তব্য নেয়ার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।