আমনের ক্ষেতে নানা রোগ বালাইয়ে দিশেহারা রাজগঞ্জ এলাকার কৃষক

0

ওসমান গণি, রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নে চলতি রোপা আমন মৌসুমে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ ও নানা রোগ বালাইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাজার হাজার কৃষক। পোঁকা ও রোগ বালাই দমনে নামি-দামি কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করেও ভাল ফলাফল না মেলায় রোপা আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র অর্জন না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতের ধান গাছের পাতা রোগে আক্রান্ত হয়ে সাদা রূপ ধারন করে ধান গাছ পচে যাচ্ছে।
বিশেষ করে উচ্চ ফলনসীল একাধিক জাতের ধানে পোকার আক্রমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবার কিছু কিছু ধান ক্ষেতে খোল পচা, মাজরা পোকা ও কারেন্ট পোকার আক্রমনে উঠতি রোপা আমন ধানের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব পোকা দমনে কৃষকেরা নামি-দামি কোম্পানির কীটনাশক ক্ষেতে ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। কৃষকেরা বলছেন, তীব্র তাপদহের পর আকাশ থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির মারাত্মক সংকটের কারণে ক্ষেতের জমি ফেঁটে চৌচির। এমতাবস্থায় পানি কিনে রোপা আমন চাষ করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ কারণে এবার ৯শ ৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়নি। বিভিন্ন মাঠ এখন সবুজ গাছে ভরে উঠেছে। তবে এলাকার কৃষকরা চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করলেও তীব্র পানি সংকট ও ধান গাছ পঁচা রোগসহ মাজড়া ও কারেন্ট পোঁকার আক্রমনে তাদের সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিনত হতে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরে বৃহত্তর এ উপজেলায় রোপা আমন চাষ হয়েছিল ২৩ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে চলতি বছরে রোপা আমন চাষ হয়েছে মাত্র ২২ হাজার ৬শ ৭০ হেক্টর জমিতে। যা গত মৌসুমের চেয়ে ৯শ ৮০ হেক্টর কম। বৃহত্তর এ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়নে ৫২টি ব্লক রয়েছে। প্রতিটা ইউনিয়নে ৩টি করে ব্লক রয়েছে। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ৫১টি ও পৌরসভায় একটিসহ সর্বমোট ৫২টি ব্লক রয়েছে। এই ব্লকের আওতায় রোহিতা ইউনিয়নে ১৫শ ৯৭ হেক্টর, কাশিমনগরে ৯শ ৮৩, ভোজগাতি ৮শ২০ হেক্টর, ঢাকুরিয়ায় ১হাজার ৮শ ২৩ হেক্টর, হরিদাসকাটিতে ১১শ ১৩ হেক্টর, মনিরামপুর সদর ৭শ ২৭ হেক্টর, খেদাপাড়ায় ২হাজার ২শ ৫৩ হেক্টর, হরিহরনগরে ১হাজার ৬শ ৩২ হেক্টর, ঝাঁপাতে ২হাজার ২শ ৩৬হেক্টর, মশ্মিমনগরে ১৬শ ৭৮ হেক্টর, চালুয়াহাটিতে ১৫শ ৫০ হেক্টর, শ্যামকুড়ে ১৫শ ৫৫হেক্টর, খাঁনপুরে ১৬শ ৭২ হেক্টর, দূর্বাডাঙ্গায় ৮শ ৫৮হেক্টর, কুলটিয়ায় ৫শ ৩ হেক্টর, নেহালপুরে ৪শ ৩৩ হেক্টর, মনোহরপুরে ৫শ ২৫ হেক্টর ও পৌরশহর এলাকায় ৮শ ১২ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে।
এরমধ্যে দেশীয় উচ্চ ফলনসীল বিনা-১৭, বিনা-৭, বিআর- ৪৯, বিআর- ৫১, বিআর- ৮৭, বিআর-৫৮, বিআর- ৭৫ বিআর-২৩ ও বিআর ১০ জাতের ধানসহ বিদেশি স্বর্ণা ধানের ব্যাপক চাষ হয়েছে বলে জানা যায়। কৃষকদের অভিযোগ চলতি আমন মৌসুমের শুরু থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ায় তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। এতে কৃষকদের ক্ষেতে গভীর নলকুপ থেকে কয়েকদফা সেচ দিয়ে রোপনের কাজ শেষ করতে হয়েছে। তাতে করে খরচ ও অনেক বেশি হয়েছে বলে কৃষকরা জানান। এদিকে রোপন কৃত রোপা আমন ক্ষেতে সার ছিটানোর সময় উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের এক শ্রেণির অধিক মুনাফা লোভি ব্যবসায়ী বাজারে সারের তীব্র সংকট সৃষ্টি করে। যে কারণে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে কৃষকদের সার সংগ্রহ করে জমিতে ছিটাতে হয়েছে।
সরজমিনে কথা হয়, ঝাঁপা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম রসুল, হানুয়ার গ্রামের মোজাম গাজী, মিজানুর রহমান, সাগর হোসেন, কৃষক বিল্পব গাজী, জমশেদ আলী, শাহপুর গ্রামের মুকুল সানা, রিপন সানা, বেলতলা গ্রামের মুতাসিম বিল্লাহ, রামনাথপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ ও পানিছত্র গ্রামের আইউব হোসেনের সাথে তারা জানান, চলতি মৌসুমে কিছু কিছু আমন ধানের ক্ষেতে পোঁকার আক্রমনটা একটু বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ধানের পাতা মোড়ানো পোঁকায় পাতা খেয়ে ফেলায় সাদা বর্ণের পাতায় ভরে গেছে এলাকার অনেক ক্ষেত। অভিযোগ উঠেছে, আমন ক্ষেতের পোঁকা দমন করতে এলাকার কৃষকরা বিভিন্ন হাট-বাজারের সার ও কিটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছে পরামর্শের জন্য গেলে ওই ব্যবসায়ীরা কমদামের কিটনাশক চড়াদামে কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেন। যা ক্রয় করে আর্থিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকেরা।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তবিবুর রহমান জানান, বর্তমানে রোপা আমন ক্ষেতে পাতা মোড়ানো, মাজরা, কারেন্ট পোঁকা ও গাছ পঁচারোগ দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষেতে শক্তিশালী কীটনাশক ও ভিটামিন জাতীয় ওষুধ জমিতে প্রয়োগ করলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।