চৌগাছায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় গত অর্থবছরে ৪০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ৮০ লাখ টাকার অর্ধেকই আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া বিল ভাউচারে মনগড়া বিল তৈরি করে বেশির ভাগ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। সীমাহীন এই দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে পিইডিপি-৪ এর আওতায় বিদ্যালয় মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী এই কাজ তদারকির পর প্রত্যয়ন দেয়ার কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে করা হয়নি। বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকরা উপসহকারী প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয়ন নিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। পরবর্তীতে ওই প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের চেক গ্রহণ করেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ স্কুলে কোনো কাজ হয়নি।
সরজমিনে উপজেলার কয়ারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্দে ভূয়া বিল ভাউচারে ৮ হাজার টাকার টাইলস ক্রয় উল্লেখ থাকলেও টাইলস স্থাপনে মিস্ত্রি বাবদ ব্যয় লেখা হয়েছে ১৩ হাজার টাকা ও বিদ্যালয়ের ৮ টি কক্ষ রং ক্রয় বাবদ ১ লাখ ২৮ হাজার ৭শ টাকা ব্যয় লেখা হয়েছে। ক্ষুদ্র মেরামতের অন্যান্য বিল ভাউচার দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নুর-ই আলম মুক্তি সাফ জানিয়ে দেন, উপর থেকে ভাউচার না দেখানোর নির্দেশ আছে, তাই দেখাতে পারব না। আমরা যেমন কাজ করেছি তার সবটাই প্রাথমিক কর্মকর্তা জানেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার আলীশাহ যদুনাথপুর স্কুলের ভূয়া বিল ভাউচারে ৩৬ হাজার টাকার মাটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দেয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও স্কুল অঙ্গিনায় কোনো মাটি দেয়া হয়নি। ১ হাজার ৫শ ইটে ব্যবহার করা হয়েছে ৭০ ব্যাগ সিমেন্ট এবং রাজমিস্ত্রি ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ভুয়া বিল ভাউচার অনুযায়ী বেসিনের দাম ৯ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, সমমানের বেসিনের মূল্য ২ হাজার ৮শ টাকা। এছাড়াও বালু ক্রয় বাবদ ১৪ হাজার টাকা, বারান্দার গ্রিল রং বাবদ ১২ হাজার ৭শ ৪০ টাকাসহ ভুয়া বিল ভাউচারে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। খড়িঞ্চা হার্ডওয়ার ও মেসার্স জামাল স্যানেটারি প্রতিষ্ঠানের নামে এই বিল ভাউচার করা হয়।
খড়িঞ্চা হার্ডওয়ারের মালিক জগন্নাথ কুমার বিশ^াসের নিকট জানতে চাইলে তিনি ক্রয়কৃত মালামালের বিল ভাউচারের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, আমার দোকানের নাম করে যে ভাউচার দেখানো হয়েছে তা ভুয়া। যে স্কুলের নামে ভাউচার তৈরি করা হয়েছে আমি সে সব স্কুলে কখনোই মালামাল বিক্রি করিনি। মেসার্স জামাল স্যানেটারির মালিক জামাল উদ্দীন জানান, খড়িঞ্চার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন এসে একটি ফাঁকা ভাউচার নিয়ে গেছে এটি সত্য। তবে ভাউচারে আমি কোন মালামালের নাম এমনকি মূল্য কিছুই লিখিনি ও স্বাক্ষরও করিনি। এ বিষয়ে আলী শাহ জদুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহানা খাতুন ভুয়া বিল ভাউচারের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছিলো প্রকৌশল দপ্তর থেকে কেউ আসলে ১ হাজার ৫শ করে টাকা দেয়ার জন্য। কিন্তু বিল ভাউচারগুলো কোথা থেকে নেয়া হয়েছে সেটা আমি বলতে পারবোনা। আমাদেরকে বিল ভাউচারগুলো দিয়েছিলেন কয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর-ই আলম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক জানান, শত ভালো কাজের পরও বিল ভাউচার জমা দিলে প্রকৌশলীদের মনের মতো হয় না। তাই স্কুল প্রতি ১ হাজার ৫শ টাকা প্রদান করে উপজেলা প্রকৌশল কার্যলয় থেকে ভুয়া বিল ভাউচার নিয়েছি। তিনি বলেন ৪০ টি বিদ্যালয়ের একই অবস্থা।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার মনিরুল ইসলাম টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা জোর করে কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। প্রধান শিক্ষকরা খুশি হয়ে আমাদেরকে টাকা দিয়েছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র মেরামতের কাজের বিষয়ে কোন অনিয়ম থাকলে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। বরাদ্দের টাকা নিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। ভুয়া বিলভাউচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার জানা নেই। আমি গুরুত্বের সাথে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।