মহম্মদপুরে জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

0

 

মহম্মদপুর (মাগুরা) সংবাদদাতা ॥ মহম্মদপুর উপজেলায় জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। উপজেলার ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের প্রয়োজন। ২৫টির মধ্যে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। এসব ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। ছাদের কিছু কিছু স্থানসহ বারান্দার পিলারের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে গেছে রড। কোথাও রয়েছে বড় বড় ফাটল। এমন ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ফলে এই ভবন ধসে পড়ে প্রাণহানিসহ বড় কোনো দুর্ঘটনার আতঙ্কে রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পুরাতন ভবন রয়েছে ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নতুন ভবনের জন্য এসব বিদ্যালয়ের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চারটি স্কুলের অবস্থা চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলো- নাগড়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাড়–য়ারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইনগর সরকারি প্রাথিমক বিদ্যালয় এবং পাল্লারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে ৮৬ নং নাগড়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটির অবস্থা চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও খুবই নাজুক।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বড় বড় ফাটল। ছাদের বিভিন্ন জায়গাসহ বিমের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে এসেছে। পিলারের পলেস্তারা খসে পড়ে শুধু রড রয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এ রকম ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে নাগড়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত হলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করে চলেছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। সারাক্ষণই শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আতঙ্কের মধ্যে পাঠদানসহ শিক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছেন। ফলে যে কোনো মুহূর্তে বিদ্যালয়ের এই ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতী, চৈতি সাহা, রহিমাসহ পঞ্চম শ্রেণির প্রিতম, আয়শা ও রিয়া বলে, ক্লাস করতে ভয় লাগে। কিন্তু স্যাররা ক্লাস করতে বলে তাই ক্লাস করি। ক্লাসে ঢুকার আগে ছাদের দিকে তাকাই। খুব ভয় লাগে। সহকারী শিক্ষক মো. সাজ্জাদুজ্জামান জানান, ক্লাসে এসে যেমন শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকে, তেমনি আমরাও ভয়ে থাকি। কখন যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে বলা মুশকিল।
নাগড়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়ুব আলী ফকির বলেন, ১৯৯১ সালে একতলা বিশিষ্ট এই ভবনটি স্থাপিত হয়। তিন রুমের এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাধ্য হয়ে পাঠদান করাতে হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে গেলে ভবনের ফাটলের দিকে চোখ পড়লে আর পড়াতে মন চাই না। শ্রেণি সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে ক্লাস নেই। ভয় লাগে কখন ছাদ ধসে প্রাণহানি ঘটে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, উপজেলার ২৫টি বিদ্যালয়ের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে। তবে চারটি বিদ্যালয় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে নাগড়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনের বিকল্প হিসেবে আমরা পাশে টিনশেড ঘর তৈরি করে ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা করেছি।