নওয়াপাড়ায় সরকার গ্রুপের অফিস থেকে উদ্ধার হলো নৈশপ্রহরীর রক্তাক্ত মরদেহ

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, অভয়নগর॥ যশোরের অভয়নগর উপজেলার শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ায় গলায় গামছা পেঁচানো রক্তাক্ত অবস্থায় মিন্টু তরফদার (৬০) নামের এক নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।  শনিবার দুপুরে উপজেলার তালতলা এলাকায় আকিজ জুট মিলের সামনে সরকার গ্রুপের ঘাটের অফিসের ভেতর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রক্তাক্ত মরদেহটি অফিস কক্ষের ভিতর গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিলো।
নিহত মিন্টু তরফদার উপজেলার চেঙ্গুটিয়া বুড়োর দোকান এলাকার মৃত মুসা তরফদারের ছেলে। গত ৪ বছর আগে তিনি বেঙ্গল টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন মডেল কলেজের পাশে বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি সরকার গ্রুপের ওই ঘাটে নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঘাটের ম্যানেজার হাবিবুল্লাহ হাবিবের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে নৈশপ্রহরী পদে মিন্টু তরফদার সরকার গ্রুপের ওই ঘাটে যোগ দেন। শনিবার সকাল আনুমানিক ৯টার সময় অফিসে গিয়ে হাবিবুল্লাহ অফিস কক্ষের দরজা খোলা এবং ঘাটের সব বাতি জ্বলতে দেখেন এবং অফিসের মেঝেতে গলায় গামছা পেঁচানো রক্তাক্ত অবস্থায় মিন্টু তরফদারের দেহ দেখতে পান। পরে তিনি ঘটনাটি অভয়নগর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। তবে কে বা কারা কী কারণে তাকে হত্যা করেছে তা তাৎক্ষনিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে সকালেই অভয়নগর থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা পৃথকভাবে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটনে মাঠে নেমেছেন বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী, ছেলেসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানাগেছে।
এ ব্যাপারে নিহতের ছেলে ইনামুল জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি সরকার গ্রুপে মোটর মেকানিক হিসেবে কাজ করছেন। কী কারণে খুন করা হয়েছে বা তার বাবার কোনো শত্রু ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি ময়নাতদন্ত ও সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। হত্যাকারীরা তাদের আরো ক্ষতি করতে পারে বলে তার ধারণা।
নিহতের স্ত্রী জুলেখা বেগম ও তার পুত্রবধূ দাবি করেন, গত এক সপ্তাহ আগে সরকার গ্রুপের ওই ঘাটের ম্যানেজার হাবিবুল্লাহ হাবিবের সাথে নৈশ প্রহরী মিন্টু তরফদারের চেয়ার টেবিল মোছা নিয়ে তর্কবিতর্ক ও কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ম্যানেজার হাবিবুল্লাহ মিন্টু তরফদারকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এক প্রশ্নের জবাবে জুলেখা বেগম সাংবাদিকদের কাছে এ সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে হত্যাকারীরা তার একমাত্র সন্তান ইনামুল তরফদারকেও খুন করে ফেলতে পারে।
এ ব্যাপারে ঘাটের ম্যানেজার হাবিবুল্লাহ হাবিবের সাথে কথা বলতে তার ব্যবহৃত ০১৯৫৭-১৫৮৭৬০ নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে নিহত মিন্টুর প্রতিবেশীরা জানান, পরিবারটি শান্তি প্রিয়। তাদের পরিবারে কখনও গ্যাঞ্জাম করতে শোনেনি কেউ।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম শামীম হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সরকার গ্রুপের ঘাটের অফিসে পাওয়া নৈশপ্রহরীর মুখম-ল রক্তাক্ত ও গলায় হলুদ রঙের একটি গামছা পেঁচানো ছিল। সন্দেহজনক মৃত্যু হওয়ায় মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে’। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে দাবি করে ওসি বলেন, হত্যার মোটিভ উদঘাটনে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।