জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চৌগাছায় বেড়েছে সব ধরনের পণ্যের দাম

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চৌগাছার সর্বক্ষেত্রে। যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, সবজিসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। পোশাক, জীবন বাঁচানো ওষুধ, প্রসাধনী, শিশু খাদ্যসহ দাম বাড়েনি এমন কোনো পণ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কিভাবে সামনের দিনগুলো পার করবেন তা ভেবে সকলেই ব্যাকুল।
শুক্রবার চৌগাছার সাপ্তাহিক হাটের দিন, এদিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে সব কিছুর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন কিছুটা কম দামে পণ্য কেনার জন্যে। কিন্তু সব জায়গায় একই দাম হওয়ায় বাধ্য হয়ে বাজারের তালিকা ছোট করে কোনোরকম কেনাকাটা সেরে একবুক হতাশা নিয়ে তারা ফিরছেন ঘরে।
বাজার করতে আসা শামীম রেজা রানা, মিজানুর রহমান, মতিয়ার রহমান বলেন, কিছুটা সকালেই বাজার করতে এসেছি, যদি একটু কম দামে কেনাকাটা করা যায়। কিন্তু না, গতকালের চেয়ে আজ আরও বেড়েছে পণ্যের দাম। আড়াইশ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, তাই দেড় শ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে বাধ্য হয়েছি। না কিনলে নয় তাই নামমাত্র সবজি কিনে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। এভাবে চলতে পারেনা, আমরা কিভাবে বেঁচে থাকবো, কাকে বলবো কষ্টের কথা আর কে বা আমাদের কথা শুনবে, পাশে দাঁড়াবে।
সবজি বিক্রেতা ডবলু মিয়া বলেন, প্রতি দিনই সবজির বাজার বাড়ছে। আমরা যেভাবে সবজি কিনছি সেই ভাবেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। এদিন সবজি বাজারে কাঁচামরিচ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। অনুরূপ ভাবে ১ কেজি ওল ৭০ টাকা, খিরাই ৪০ টাকা, ভেন্ডি/ ঢেড়স ৪০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিঠাকুমড়া ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের জন্যে হাজার টাকার সওদা করতে পারলে কোনো রকমে থলে ভরছে।
মাছের বাজারের পরিস্থিতি আরও খারাপ বলে জানা গেছে। আল্লাহর দান মৎস্য আড়তের মালিক সহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। মাছ কম আসায় দাম খুবই বেশি। শুক্রবার ১ কেজি জাটকা ইলিশ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা পাইকারি বিক্রি হয়েছে। মিঠাপানির মাছের দামও কয়েক গুণ বেড়েছে। খুচরা মাছ বিক্রেতা সাধন কুমর জানান, দীর্ঘ দিন ধরে মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এবছর মাছের যে দাম তা কখনও দেখেননি।
দাম বেড়েছে সব ধরনের পোশাকে। বাজারের ছিট কাপড় ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক বলেন, তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে সব ধরনের ছিট কাপড়ের দাম প্রকার ভেদে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে ক্রেতা সাধারণের সংখ্যাও কমেছে। পলি-পপি বস্ত্র বিতানের মালিক আজিজুর রহমান, ইব্রাহীম বস্ত্রবিতানের মালিক ডাবলু বলেন, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা এমন কোনো পোশাক নেই যে তার দাম বাড়েনি। এক মাস আগেও দিনে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারাগেছে, কিন্তু এখন দিনে ২ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছেনা। ‘ঘরভাড়া, বিদুৎ বিল, কর্মচারী বেতন এসব খরচ কিভাবে চালাবো ভেবে পারছিনা’।
চা বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম, তালাচাবি মেরামত কাজে নিয়োজিত আব্দুল্লাহ হোসেন লাল্টু বলেন, এর আগে দিনে ৩ থেকে ৪শ টাকা রোজগার হয়েছে। এখন অর্ধেকও হচ্ছেনা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। ‘মোটসাইকেল মেরামতের কাজে নিযুক্ত শান্তি মিয়া বলেন, কাজ অর্ধেকে নেমে এসেছে। তেলের দাম বাড়ার কারণে মানুষ সেভাবে মোটরসাইকেল বের করছে না কাজও হচ্ছেনা, এখন কর্মচারী ছাটাই করা ছাড়া টিকে থাকা সম্ভবনা। অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে ডিমে। এক খাচি (৩০পিচ) ডিমের দাম এখন সাড়ে ৩শ টাকা যা এক মাস আগেও ছিল আড়াইশ টাকা। সব ধরনের মুগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে, তবে গরুর মাংসে দাম স্থিতিশীল আছে।
তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বাস ভাড়ার পাশাপাশি সিএনজি, ইজিবাইক এমনকি ব্যাটারি চালিত ভ্যানের ভাড়াও বেড়েছে। এসব ছোটখাটো যানবাহনের মালিকরা বলেন, সব কিছুর দাম বেড়েছে, তাই ভাড়া বৃদ্ধি করা ছাড়া সংসার চালানো সম্ভবনা।
জীবন বাঁচানো ওষুধের দামও বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিশেষ করে নাপা গ্রুপের সব ধরনের ওষুধের দাম ২ টাকা হতে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রোটিনেক্স আইভি ওষুধটি একলাফে ৩৫০ হতে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুক্তার ফার্মেসির মালিক মুক্তার হোসেন বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো ওষুধের দাম বাড়ছেই।
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। পৌর এলাকার বেলেমাঠ গ্রামের কৃষক মকছেদ আলী বলেন, প্রতি আমন মৌসুমে ৪ থেকে ৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেন। এবছর এখনও ধান রোপণ করতে পারেন জোন থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ধান চাষ করে লাভ তো দূরের কথা লোকসান হবে বেশি। তিনি তাই সমুদয় জমি লিজ দেওয়ার কথা ভাবছেন। তার মতে, যদি লিজ না হয় তাহলে জমি এবছর খালিই পড়ে থাকবে, কিছুই করার নেই।
বর্তমান যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুত উন্নতি না ঘটলে সামনের দিন গুলোতে চরম ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সকলকে এমনটিই মনে করছেন সচেতন মহল।