ইউরিয়ার মূল্য হ্রাস অত্যন্ত প্রয়োজন

0

সরকার একেবারেই আকস্মিকভাবে কৃষিতে সর্বাধিক ব্যবহৃত ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধি করে সেই দিনই তা কার্যকর করেছে। ফলে, বিক্রেতা রাতারাতি ধনী আর দরিদ্র কৃষক মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এখন আমন ধানের ভরা মওসুমে এমন অপ্রতাশিত মূল্য বৃদ্ধি তাদের হতাশ করেছে। সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়া সারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে এবং ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সরকার ইউরিয়া সারের দাম কেজিপ্রতি ছয় টাকা বাড়িয়েছে। ঘোষণার পর থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ১৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৬ থেকে ২২ টাকা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তারা আরও বলছেন, নতুন দামে আমদানির আগে নতুন দাম কার্যকর কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখা উচিত।
এটা ঠিক ইউরিয়া সারে সরকারকে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি সেই ভর্তুকির পরিমাণ আরো অনেক বেড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ৮১ টাকা। গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ছয় টাকা দাম বাড়ানোর পরও সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল সাত হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। আবার এই ভর্তুকি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অনেক দাতা সংস্থার আপত্তিও রয়েছে। জানা যায়, আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে বিভিন্ন খাতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয় তা কমাতে বলেছে। সরকার মূলত সেটাই শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস, বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও এমন হতে পরে।
দুই দফা বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে তাঁরা নতুন করে ধারদেনা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। শ্রমিক, কীটনাশক, সেচ, জমি চাষসহ সর্বত্রই তাঁদের অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সারের অস্বাভাবিক বাড়তি দাম তাঁদের কাছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বিবেচিত হবে। অনেক কৃষিবিদ দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিত রাখারও অনুরোধ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, তা না হলে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে নিরুৎসাহ হয়ে পড়বেন। যারা চাষ করবেন তাদের ফসলের দাম অনেক বেড়ে যাবে। এর বিরূপ পড়বে চালসহ সব পণ্যের ওপর। বাড়বে হাহাকার।
জানা যায়, ইউরিয়া সারের মজুদ সন্তোষজনক। তদুপরি আমাদের যেসব ইউরিয়া সার কারখানা রয়েছে, সেগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে পুরোদমে চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আর তা করা গেলে আমদানির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। এতে ভতুর্কি চাপও কমবে। ফলে মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না। আমরা কৃষি, কৃষক ও চালসহ সজ পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ইউরিয়ার মূল্য হ্রাস জরুরি মনে করি।