আমনের আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তায় যশোরসহ ৬ জেলার চাষি

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ আমন আবাদ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন যশোরসহ দক্ষিণের ৬ জেলার চাষিরা। আষাঢ় শেষ ও শ্রাবণের চারদিন চলে গেলেও কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা নেই দক্ষিণের জেলাগুলোতে। অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে এ অঞ্চলের আমনের মাঠ। অন্যান্য বছরে এমন পরিস্থিতিতে পুকুর বা খালের পানি দিয়ে কৃষকরা কোন রকম চাষাবাদ করলেও এবার সে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে এবছর আমন আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষিবিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার জন্য আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমি। এর মধ্যে যশোর জেলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর, ঝিনাইদহে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর, মাগুরায় ৬১ হাজার ৪৭২ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় ৩৪ হাজার ৯২০ হেক্টর ও মেহেরপুর জেলায় ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমি রয়েছে। এসব জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান চাষ করার কথা রয়েছে। তবে, এই ৬ জেলার মধ্যে শুধুমাত্র যশোর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার ৭শ ৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপন করা হয়েছে। বাকি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় এখনও পর্যন্ত এক শতাংশ জমিতেও আমনের চারা রোপন করতে পারেননি চাষিরা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার জন্য আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে ৩৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষকও বীজতলা তৈরি করে চারা প্রস্তুত রেখেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের চারা রোপন শুরু করতে পারেননি কৃষক। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যে তথ্য জানানো হচ্ছে তাতে খুব সহসাই বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলেই কৃষক পুরোদমে চাষ শুরু করে দেবেন। একই কথা বলেন মেহেরপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল আলম তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ নিয়ে পিছিয়ে আছি। বৃষ্টির অভাবে ফসলের ক্ষেতে পানি না জমায় চাষিরা এখনও আমন আবাদ শুরু করতে পারেননি। তবে বৃষ্টি হলেই ধানের চারা রোপন শুরু হবে বলে তিনি জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুজ্জামান বলেন, শুধু যশোরেই নয়। প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে দেশের অনেক জেলাতেই প্রায় একই অবস্থা। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। তবে আমন মৌসুমের ধান রোপণের সময় খুব বেশি পিছিয়ে যায়নি। আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা করেন।
কৃষকরা জানান, সাধারণত বৃষ্টির পানি নির্ভর আমন চাষে কৃষকের খরচ কম হয়। এ কারণে কৃষকদের কেউ কেউ বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকলেও বেশিরভাগ কৃষক বলছেন সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, অনেক কৃষকের বীজতলায় চারার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। চারার বয়স বেশি হলে ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কায় তারা বৃষ্টির অপেক্ষায় বসেও থাকতে পারছেন না। এ অবস্থায় কৃষকরা সেচ দিয়েই আমন ধানের চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কথা হয় বাঘারপাড়ার হাবুল্ল্যা মাঠের কৃষক শরিফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ৪ বিঘা জমিতে এবার ধান চাষ করবেন। তিনি বললেন, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা না করে বাধ্য হয়ে সেচের পানিতে চাষ শুরু করতে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. এখলাছ হোসেন বলেন, আমন আবাদ নিয়ে কৃষকের পাশাপাশি আমরাও চিন্তায় আছি। তবে এখনও চাষের সময় চলে যায়নি। খুব সহসা বৃষ্টি হলেই সমস্যা কেটে যাবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় এলাকাতেই ধানের চারা রোপন শুরু হয়েছে। প্রকৃতিতে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তাতে খুব তাড়াতাড়িই কাঙ্খিত বৃষ্টি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।