যশোরে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শিপলু ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগে আটক

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলোচিত শেখ শাহজাহান কবির শিপলুর শহরের এইচএমএম রোডের ‘টর্চার সেল’ থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে শেখ সাইফুল ইসলাম (৩৫) নামে একজন ব্যবসায়ীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোছা. কুলসুম (৩০) নামে একজন নারীর অর্থ সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে সেখানে নিয়ে নির্যাতন এবং অর্ধলক্ষাধিক টাকা আদায়সহ কয়েকটি ব্লাঙ্ক চেক ও ব্লাঙ্ক স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিলেন শেখ শাহজাহান কবির শিপলু ও তার সহযোগীরা। পুলিশ এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতাসহ ৩ জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠিসহ স্বাক্ষর করে নেয়া ব্লাঙ্ক চেক ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, ওই ঘটনায় ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। তবে শুক্রবার দুপুরে বাদীকে ডেকে নিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন আসামি পক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় মামলার বাদী কোতয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার চাঁচড়া মধ্যপাড়ার আবুল বাশারের ছেলে শেখ সাইফুল ইসলামের সাথে একই এলাকার ইমদাদুল হকের স্ত্রী মোছা. কুলসুমের ব্যবসা সংক্রান্ত পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ সংক্রান্তে কুলসুমের আদালতে করা একটি মামলা বিচারাধীন। এরই জের ধরে শেখ সাইফুল ইসলামকে অপহরণ করে  নির্যাতন চালানোসহ টাকা আদায় এবং ব্যাংকের চেক ও ব্লাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছিলো।
শেখ সাইফুল ইসলামকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী তার ভগ্নিপতি শেখ সাইফুল ইসলাম (৪০)। তিনি সদর উপজেলার মন্ডলগাতি গ্রামের শেখ জাহাঙ্গীরের ছেলে।
মামলায় শেখ সাইফুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ব্যবসায়িক সূত্রে চাঁচড়া মধ্যপাড়ার ইমদাদুল হকের স্ত্রী কুলসুমের সাথে তার শ্যালক শেখ সাইফুল ইসলামের বিরোধ চলছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে তার শ্যালক ব্যক্তিগত কাজের জন্য শহরের এইচএমএম রোড দিয়ে যাওয়ার সময় উল্লিখিত বিরোধের জের ধরে কুলসুম এবং পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার মৃত আব্দুর রবের ছেলে শেখ শাহজাহান কবির শিপলু ও বকচর কবরস্থান এলাকার মৃত সাইদুর আলমের ছেলে শফিকুল ইসলাম চিন্টুসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন তাকে অপহরণ করেন। এরপর তাকে এইচএমএম রোডস্থ জব্বার অ্যান্ড সন্সের পেছনে শিপলুর অফিসে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হয় এবং তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন অপহরণকারীরা। কিন্তু চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ফলে কোনো উপায় না পেয়ে শ্যালক শেখ সাইফুল ইসলাম পিতার কাছে মোবাইল ফোন করে ২ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেন। এরপর শেখ সাইফুল ইসলামের পিতা আবুল বাশার এবং ভগ্নিপতি শেখ সাইফুল ইসলাম ওই অফিসে গেলে অপহরণকারীরা তাদেরকেও সেখানে আটকে রাখেন। কয়েক ঘন্টা আটকে রাখার পর রাত সাড়ে সাতটার দিকে অপহরণকারীরা আবুল বাশারকে ছেড়ে দেন এবং বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। ছেলে ও জামাইয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য বাড়িতে গিয়ে আবুল বাশার অপহরণকারীদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম চিন্টুর দেয়া বিকাশ নম্বরে ১৮ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর নগদ ৩৫ হাজার টাকা, ২টি ব্লাঙ্ক চেক ও ১টি স্ট্যাম্প নিয়ে ফের শিপলুর অফিসে যান আবুল বাশার। সেখানে তিনি শিপলুকে ৩৫ হাজার টাকা দেন। এ সময় আবুল বাশারের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত ব্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পটি নিয়ে নেন কুলসুম। পরে ভগ্নিপতি শেখ সাইফুল ইসলামকে চাঁদার বাকী টাকা নিয়ে আসার জন্য ছেড়ে দেয়া হলে এরই মধ্যে কৌশলে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। এ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিপলু, কুলসুম ও চিন্টুকে হাতেনাতে আটক করে। এছাড়া অপহৃত ব্যবসায়ী শেখ সাইফুল ইসলামকে আহত অবস্থায় উদ্ধারসহ তাকে নির্যাতনে ব্যবহৃত ৩টি লাঠি জব্দ করে পুলিশ। একই সাথে অপহরণকারীদের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকাসহ স্বাক্ষরিত ব্লাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্র জানায়, নির্যাতনে আহত ব্যবসায়ী শেখ সাইফুল ইসলাম যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, অপহরণ করে আটকে রেখে চাঁদাবাজির ঘটনায় শিপলু, কুলসুম ও চিন্টুর বিরুদ্ধে রাতেই থানায় মামলা করেছেন অপহৃত শেখ সাইফুল ইসলামের ভগ্নিপতি শেখ সাইফুল ইসলাম। শুক্রবার আটক ৩ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই শরীফ আলমামুন জানান, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার শেখ সাইফুল ইসলাম শুক্রবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। তিনি আরও জানান, আটক আসামিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক তাদেরকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম আরও জানান, বাদী শেখ সাইফুল ইসলামকে শুক্রবার দুপুরে ডেকে নিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করেছেন আসামি পক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় জড়িতদের কোতয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মামলার বাদী।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাদী শেখ সাইফুল ইসলাম মামলা তুলে নিতে তাকে চাপ সৃষ্টির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের সত্যতা স্বীকার করেন।