যশোরে পুলিশের পরিচয়ে অপহরণ চেষ্টা, সাবেক সেনা সদস্য আটক

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর-বেনাপোল সড়কের বড় মেঘলা নামক স্থানে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশ পরিচয়ে যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে এক জনকে অপহরণ চেষ্টাকালে ডিবি পুলিশের একটি টহল টিমের হাতে ধরা পড়েছেন মিজানুর রহমান (৫০) নামে এক ব্যক্তি। তবে তার সহযোগীরা প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ডিবি পুলিশ বলছে, আটক ব্যক্তি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন সার্জেন্ট।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, ভোর সোয়া চারটার দিকে তারা শার্শা এলাকা থেকে ফিরছিলেন। পথে যশোর-বেনাপোল সড়কের বড় মেঘলাস্থ দরগা ফিলিং স্টেশনের কাছে এসে পৌঁছালে দেখতে পান সেখানে একটি বাস, একটি প্রাইভেটকার ও দুটি মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে আছে। ফলে তাদের সন্দেহ হয়। তারা এ সময় গাড়ি থামিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করলে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েক ব্যক্তি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে দ্রুত পালিয়ে যায়। কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের এক সহযোগীকে সেখান থেকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান। তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার উজ্জলপুর গ্রামের মৃত মোজাহার মন্ডলের ছেলে। একসময় তিনি সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট পদে চাকরি করতেন। বর্তমানে ওই ব্যক্তি যশোরের নতুন খয়েরতলার হর্টিকালচার লিজেন্ড গ্রামার স্কুল এলাকায় বসবাস করেন।
ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাসে জানা গেছে মিজানুর রহমান ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ চোরাচালানী ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের অপহরণসহ ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছেন। এই কাজের জন্য তারা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, হ্যান্ডকাপ ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর-বেনাপোল সড়কের বড় মেঘলায় বাস থামিয়ে ডাকাতির চেষ্টাকালে স্বপন কুমার সরকার নামে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি আটক মিজানুর রহমানসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। অপর আসামিরা হলেন-যশোরের পালবাড়ির মসজিদ গলির একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া আবু তালেব (৫২), চৌগাছা উপজেলার সলুয়া আফরার মোড় এলাকার প্রাইভেটকারচালক কাজল মিয়া ওরফে মাসুদ (৪৮) এবং শার্শা উপজেলার নাভারন এলাকার হাসান (৩৫) ও বাদশা (২৮)।
ভুক্তভোগী স্বপন কুমার সরকার সাতক্ষীরার মধুমল্লারডাঙ্গী গ্রামের মৃত অনীল চন্দ্র সরকারের ছেলে। স্বপন কুমার সরকারের অভিযোগ, তিনি ও তার সঙ্গী শামীম হোসেন ব্যবসায়িক কাজে গত ৪ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রামের সেন্টমার্টিনে যান। কাজ শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর গত বুধবার রাত ১০ টার দিকে ঢাকার শ্যামলী থেকে সাতক্ষীরায় যাওয়ার জন্য ‘সাতক্ষীরা লাইন’ এর একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-১৯১৫) ওঠেন দুজনে। বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া চারটার দিকে বাসটি যশোর-বেনাপোল সড়কের বড় মেঘলাস্থ দরগাহ ফিলিং স্টেশনের পূর্ব পাশে পৌঁছালে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার ও দুটি মোটরসাইকেলে থাকা ৭/৮ ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে বাসটি দাঁড় করান। এদের মধ্যে তিন ব্যক্তি বাসের ভেতর ঢুকে পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশি শুরু করেন। এ সময় তারা স্বপন কুমারকে দেখে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে মর্মে তাকে আটক এবং বাস থেকে নামিয়ে নেন। সঙ্গী শামীম হোসেন বিষয়টি দেখে বাস থেকে নামলে তাকেও আটক করেন পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা। তাদের কাছে ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাপ ছিলো। তারা ‘কথা আছে’ বলে স্বপন কুমারকে তাদের প্রাইভেটকারে তোলার চেষ্টাকালে তিনি ওয়ারেন্ট ও আইডি কার্ড দেখতে চান। এ সময় ওই ব্যক্তিরা তাদের মারধর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করলে এরই মধ্যে আকস্মিক সেখানে ডিবি পুলিশের একটি টিম আসে। সাথে সাথে পুলিশ পরিচয়দানকারী অন্যরা দ্রুত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে সেখান থেকে পালিয়ে যান। তবে মিজানুর রহমান নামে একজন পালাতে না পারায় তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার আটক মিজানুর রহমানকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।