কোরবানির পশু হাট না থাকার ভোগান্তি যশোর শহর ও শহরতলীতে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোরবানির পশু কিনতে এবছর যশোর শহর ও তার আশপাশের মানুষকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। জেলা শহরের আশপাশে কোনো গরুর হাট না থাকার কারণে ক্রেতাদের ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তের হাটগুলোতে। অথচ অন্যান্য বছরে শহরের প্রাণকেন্দ্রে উপশহর পার্ক সংলগ্ন এলাকায় ছিল গরু বিক্রির বড় হাট। এই হাট থেকেই শহর ও এলাকার লোকজন স্বাচ্ছন্দে নিরাপদে পছন্দমত কুরবানির পশু কিনতেন। অবশ্য শহরের হাইকোর্ট মোড়ে বরাবরের মতো এবছরও চলমান রয়েছে ছাগলের হাট।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুরবানি উপলক্ষে এবছর যশোরে ছোট-বড় মিলে মোট ২৩টি পশুর হাট রয়েছে। এরমধ্যে যশোর জেলা শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে বসে জেলার বৃহৎ সাতমাইল হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা গিয়ে ওই হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকার পশুর হাটে।
এর বাইরে যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়া বাজার, বারীনগর বাজার, কোদালিয়া বাজার, ঝিকরগাছা উপজেলার ঝিকরগাছা পশু হাট, ছুটিপুর বাজার, শার্শা উপজেলার নাভারণ বাজার, সাতমাইল বাজার, মণিরামপুর উপজেলার মণিরামপুর বাজার পশুহাট, রাজগঞ্জ পশুহাট, নেহালপুর পশুহাট। কেশবপুর উপজেলার কেশবপুর পশুহাট, রবিবার সরসকাটি পশুহাট। অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভা পশুরহাট, মরিচা পশুরহাট, ও নাওলি হাট। বাঘারপাড়া উপজেলার চাড়াভিটা বাজার, ভাংগুরা বাজার, নারিকেলবাড়িয়া বাজার, খাজুরা ভাটার আমতলা। চৌগাছা উপজেলার চৌগাছা পৌর গরুর হাট। এছাড়া সদরের কাশিমপুর ও রামনগরে দুটি অস্থায়ী হাট বসছে প্রতিদিন। তবে শহর ও আশেপাশে কোনো গরুর হাট না থাকায় মানুষকে এখন কুরবানির পশু কেনার জন্য দূরের হাট থেকে পশু কিনতে হচ্ছে।
যশোর উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে উপশহর পশুর হাটটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হতে হয়। এ বছর জায়গার অভাবে আর চালু করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আগে উপশহর পার্ক সংলগ্ন এলাকা ও তার আশেপাশে কুরবানি উপলক্ষে পশুর হাট চালু রাখলেও এবছর পার্কটি সংস্কার করার কারণে সেই পরিবেশও নেই। যেকারণে হাট অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়নি।
এদিকে কাছাকাছি কোনো পশুর হাট না থাকায় যশোর শহর ও আশপাশের লোকদের ছুটতে হচ্ছে বাইরের উপজেলার হাটগুলোতে। শহরের বেজপাড়ার এলাকার তরিকুল ইসলাম বলেন, কুরবানি আসলে অন্যান্য বছরে পশু কেনা নিয়ে অনেকটা ‘রিলাক্সে থাকতাম’। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় গরুর হাট থাকায় আমাদের সুবিধা হতো। এবছর উপশহর হাট চালু না থাকায় আমাদেরকে ছুটতে হচ্ছে ঝিকরগাছা, সাতমাইল, বারীনগর হাটে। তিনি বলেন, যারা যশোরের বাইরে থাকেন। ছুটিতে এসে কাছাকাছি হাট থেকে পছন্দের গরু কিনে নিতেন।
একই কথা বলেন, রেলস্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, দূরের হাট থেকে পশু কিনে বাড়ি পর্যন্ত আনা অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ আগে আমরা উপশহর হাট থেকে ঈদের আগের দিন পশু কিনে বাড়ি নিয়ে আসতাম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ঝিকরগাছার হাটে গিয়েছিলাম গরু কিনতে। পছন্দ না হওয়ায় ফিরে এসেছি। কাল আবার যাবো বাঘারপাড়ার ভাঙ্গুড়া হাটে।
এদিকে, স্বাস্থ্যসম্মত পশু ক্রয় করতে অনেক ক্রেতা ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ছাগল দেখছেন। কিন্তু তারা দাম বলছেন চাহিদার তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক জানান, জেলায় এবার কুরবানির চাহিদা মিটিয়ে গরু ছাগল উদ্বৃত্ত থাকবে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৩টি হাটের জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ২৪টি ভেটেরিনারি মেডিকেল দল সার্বক্ষণিক হাটে দায়িত্ব পালন করছে।