যশোরের নোভা হাসপাতালে অবহেলায় রোগীর মৃত্যু

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ রক্ত এনে দেওয়া হয়েছিল আগেই। সেবিকারাও জানালেন রোগীর অবস্থা ভালো না। কিন্তু যশোরে নোভা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের ডায়লাইসিসের বিভাগের ইনচার্জ সেলিম হোসেন মোবাইলে গেম খেলছিলেন আর ওদিকে রোগী রক্ত অভাবে শ্বাস কষ্ট পাচ্ছিলেন এবং এক পর্যায়ে তিনি মারাও যান। চিকিৎসার অবহেলার কারণে মারা যাওয়া রোগীর নাম শাহেদা বেগম (৫০)। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের হরিনাথ দত্ত লেনে অবস্থিত চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির ওই প্রতিষ্ঠানটিতে এমন নিষ্ঠুর ও ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৃতা ওই নারীর স্বজনরা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে স্বজনদের।
মারা যাওয়া ওই নারী যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া পশ্চিম পাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম পিন্টুর স্ত্রী। তিনি ওই হাসপাতালে ডায়লাইসিসের জন্য বৃস্পতিবার সকালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদিকে, রোগী মারা যাওয়ার পরে ক্লিনিকের ম্যানেজারসহ ডায়লাইসিসের বিভাগের ইনচার্জ ও সেবিকারা সবাই গাঢাকা দিয়েছেন।
শাহিদা বেগমের বড় ছেলে বাপ্পী হোসেন জানান, ‘তার মা ৫ মাস ধরে কিনডি রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে দীর্ঘ চার মাস ধরে এই নোভা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে তার মাকে ডায়লাইসিস করে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ডায়লাইসিস করার আগে হাসপাতালে ডায়লাইসিস ইনচার্জ সেলিম হোসেন তাকে জানান তার মায়ের জন্য জরুরি রক্ত লাগবে। দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এক ব্যাগ রক্ত দিলে; তারা মাকে রক্ত না দিয়ে তাদের অফিসে বসে থাকেন। একপর্যায়ে মায়ের শ্বাস-কষ্ট শুরু হলে সেবিকাও ডায়লাইসিস ইনচার্জকে জানালে তারা বসে মুঠোফোন গেম খেলতে থাকেন। এর কিছু সময় পর তার মায়ের মৃত্যু হয়।
মায়ের এমন করুণ মৃত্যুতে আহাজারি করতে করতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালাই। অনেক ছুটাছুটি করে রক্ত এনে দিয়েও আমার মাকে বাঁচাতে পারলাম না।’ রক্ত আনার পর প্রথমে হাসপাতালের কর্তব্যরত একজন সেবিকা বলেন ‘এখন আমার দায়িত্ব শেষ; অন্যজন আসলে দিয়ে দেবে।’ আর অন্যজন মোবাইলে গেম খেলছিলো। ‘হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার মাকে বাঁচাতে পারলাম না। ’মৃতের মেঝ ছেলে সফিয়ার রহমান আজাদ অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের মা মারা যাওয়ার পরে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই রেজাউলের নেতৃত্বে একটি ফোর্স আসে। তিনি এসেই মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এমনকি রোগীর মৃত্যু সনদ পর্যন্ত দেয়নি। তারা মৃত্যু সনদ ও বিচার না পেলে বাড়ি যাবেন না এ কথা বললে ওই পুুলিশ কর্মকর্তা উল্টো তাদের মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। তবে মামলা দেওয়ার হুমকির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে কোতয়ালী মডেল থানার কর্মকর্তা এস আই রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা নোভা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনেছি। স্বজনদের মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে জানান, মারা যাওয়া রোগীকে এর আগেও তারা ডায়লাইসিস করেছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। কী কারণে আজ মারা গেলে তারাও বুঝতে পারছেন না। আর ওই রোগীর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা হয়নি।
এই বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, স্বজনরা এখনো তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।