রামপালে আবাসন প্রকল্পের ঘর বিক্রি করে ‘ভূমিহীন’রা ফিরে যাচ্ছে বাড়ি!

0

এম এ সবুর রানা, রামপাল (বাগেরহাট) ॥ রামপাল উপজেলার সবচেয়ে বড় ফয়লাহাট আবাসন প্রকল্প। নির্মাণের পর এ প্রকল্পে ধাপে ধাপে সাড়ে ৪শ ভূমিহীন পরিবারের ঠাঁই হয়। অনেকে ঘর পাওয়ার পর দুই একদিন থেকেছেন। তারপর এক সময় তারা তালা ঝুলিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র। আর ফিরে আসেননি। আবার কেউ কেউ নগদ টাকায় অন্যের কাছে ঘর বিক্রি করে ফিরে গেছেন আগের ঠিকানায়। এখন ওই আবাসনের প্রায় ৭০টির মতো ঘর খালি পড়ে আছে।
সরোজমিনে ওই আবাসন প্রকল্প ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দাউদখালী নদীতে পলি পড়ে ভরাট হলে ওই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেন সরকারের পক্ষে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক। এরপর ২০১০ সালে ফয়লাহাটের পার গোবিন্দপুর মৌজার খাস জমির ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ আবাসন প্রকল্পে ২৮টি পাকা ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে ৫টি করে কক্ষ রয়েছে। এছাড়া টিন শেডের রয়েছে আরও ৪০টি ঘর। সব মিলিয়ে ৬৮টি ভূমিহীন পরিবারের ঠাঁই হয় এ আবাসন প্রকল্পে।
শুরু থেকে বসবাস করছে এমন কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা হলে তারা জানান, যারা প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন এখানে বসবাস করে না। কেউ কেউ নগদ টাকায় ঘর বিক্রি করে চলে গেছেন। আবার অনেকেই দু-একদিন ঘরে থাকার পর তালা ঝুলিয়ে চলে গেছেন। তারা আরও জানান, যারা চলে গেছেন তাদের প্রত্যেকেরই বাড়ি-ঘর রয়েছে। তারা প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন কিনা সঠিক ভাবে তা যাচাই বাছাই না করে ঘর বরাদ্দ দেয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। এক নারী জানান, সম্প্রতি তার বোন ৭০ হাজার টাকায় দুটি ঘর কিনেছেন।
জানা গেল, তার মতো আরও বেশ কয়েকজন ঘর কিনে বসবাস করছেন। সরকারি নিয়মে আবাসনের ঘর বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। অথচ একের পর এক ঘর বিক্রি চলছে। যাদের বসবাসের কোনো ব্যবস্থা নেই তারা ২০/২৫ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন। কোনো কোনো ঘর একাধিকবার টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। ৪০টি টিন শেডের ঘরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ঘর এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব ঘর পড়ে থাকায় মরিচায় খয়ে টিনের চালা, বেড়া, দরজা ও জানালা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী এসব ঘরে এখন সাপ বাসা বেধেঁছে।
টিনের ঘরে বসবাস করেন এমন একজন নারী বলেন, ঘর পাওয়ার পর একদিনও ঘরে আসেননি এমন লোকও আছে। ঘরে বসবাস করে না এমন কয়কজনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারাও রয়েছেন। ঘর না থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, যারা ঘর পেয়েও আসেন না তাদের প্রত্যেকেরই বাড়ি -ঘর রয়েছে। সেখানে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। দুই একজন মাঝে মধ্যে এসে দখল ধরে রাখতে ঘর খুলে ঝাড়ু দিয়ে চলে যান।
নাম প্রকাশ না করে এক সাবেক জনপ্রতিনিধি বলেন, রামপালের সাবেক ইউএনও জিল্লুর রহমানের সময় ফয়লাহাটে বসে ভূমিহীন যাচাই বাছাই করা হয়েছিল। ওই সময় স্থানীয় সরকার দলীয় কিছু নেতা ভূমিহীনদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ঘর বরাদ্দ পেতে সহায়তা করেছিলেন। যারা সুবিধা দিয়ে ঘর পেয়েছিলেন তারাই পরবর্তীতে ঘর বিক্রি করে চলে গেছেন। আবাসনের একটি ব্যারাকে অন্যের ঘরে দুই শিশু সন্তান নিয়ে স্বামী রবিউলের সাথে থাকেন খাদিজা বেগম নামের এক নারী। জমিজমা বলতে কিছুই নেই। স্বামীর আয়ে চলে তাদের সংসার। নেই মাথা গোজার ঠাঁই। একটি ঘরের জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে আকুতি মিনতি করে বলেন, ভাইজান অনেকে ঘরে থাকে না। সেই সব ঘরের একটি ঘর আমাকে দেন। তার মতো ফাতেমা খাতুন নামের আরেক নারী বলেন, তারও বসবাসের ঘর নেই। তার এক আত্মীয়ের ঘরের বারান্দায় থাকেন। একটি শিশু সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে কোন মতে আছেন তারা। তিনিও একটি ঘরের জন্য বার বার আকুতি জানাচ্ছিলেন। খাদিজা- ফাতেমার মতো আরও অনেকেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। তারাও চান একটি ঘর।
এ ব্যাপারে রামপাল উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যে সব কক্ষ শূন্য পড়ে আছে সেই সব কক্ষে প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। যাদের ঘর নেই তারা আবেদন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।