বারোবাজারে আ.লীগ নেতার কাণ্ড মিছিলে না যাওয়ায় দাড়ি টেনে কিল-ঘুষি,অপমানে আত্মহত্যা

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার ইন্ধনে গ্রামে গ্রামে নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। মিছিল মিটিংয়ে না যাওয়ায় মারধর ও বয়োবৃদ্ধদের চুল দাড়ি ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এই নির্যাতনের হাত থেকে নিজ দলের নেতাকর্মীরাও বাদ যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে বাদুরগাছা গ্রামের বিএনপি কর্মী সাজু হোসেন ও ইমনকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত ভাইরাল হয়। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নির্যাতিত আওয়ামীলীগের এক ওয়ার্ড সভাপতির বিষপানে মৃত্যুর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এদিন ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, কালীগঞ্জের বারোবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ নিজ দলের ওয়ার্ড সভাপতি দাউদ শেখকে চুল দাড়ি ধরে মারধর করেন। মিছিলে না যাওয়ার কারণে বুধবার বেলাট দৌলতপুর গ্রামের আলিম মাদ্রাসা এলাকায় জনৈক আনসারের চায়ের দোকানে শত শত মানুষের সামনে দাউদ শেখকে মুখের দাড়ি টেনে ধরে কিল-ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন চেয়ারম্যান আবুল কালাম। এ ঘটনায় মানসিকভাবে চরম ক্ষুদ্ধ ও অপমান অপদস্ত হন বৃদ্ধ দাউদ শেখ। তিনি একটি সুইসাইডাল নোট লিখে বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে এক বুক হতাশা নিয়ে বিষপান করেন। তাকে যশোর আড়াই’শ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকালে মৃত্যুবরণ করেন। দাউদ শেখের সুইসাইডাল নোটটি তার নাতি ছেলে শাকিলের কাছে ছিল বলে এলাকাবাসী জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান কালামের সহযোগী মেম্বার শাহীন ও প্রশান্ত কুমার ছিনিয়ে নিয়ে সুইসাইডাল নোটটি নষ্ট করে ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে বারোবাজার ইউনিয়নজুড়ে যে নৃশংসতা শুরু হয়েছে তার বলি হয়ে অনেকেই বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে। নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনি লস্কার এক শালিশের মধ্যে ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমানকে ব্যাপক নির্যাতন করেন। তিনিও বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা গেছে। একই ইউনিয়নের মহিষাহাটী গ্রামের বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালানো হলে গ্রামবাসী প্রতিরোধ করে। বাদুরগাছা গ্রামের আবু সিদ্দিকের ছেলে সাজু হোসেন বিএনপির একজন সমর্থক। সম্প্রতি তাকে আওয়ামীলীগের মিছিলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন। মিছিলে না যাওয়ায় সাজু হোসেন ও একই গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে নাইমকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। রক্তাক্ত সেই ছবি ভাইরাল হলে ইউনিয়নজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে বারোবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাদুরগাছা গ্রামে যাদের মারধর করা হয়েছে তাদের সঙ্গে স্থানীয় মেম্বরের ঝামেলা ছিল। সে কারণে হয়তো মেরেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিষপানে আত্মহননকারী আওয়ামীলীগ নেতা দাউদ শেখের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। কিছুদিন আগেও আমি তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি।’ চেয়ারম্যানের দাবি, দাউদ শেখ নিয়মিত স্পিরিট পান করতেন। তার মাথায় সমস্যা ছিল। দেনায় জড়িয়ে পারিবারিকভাবে তিনি ঝামেলায় ছিলেন। এসব কারণে তিনি বিষপান করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই প্রতিপক্ষরা এ সব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর এই অপপ্রচারকারীদের বেশিরভাগ এমপি বিরোধী নিজ দলের কিছু নেতা ও বিএনপি সমর্থক বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, ‘আমি শুনেছি দাউদ শেখ নামে এক ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। যশোর হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। তার মারধরের বিষয়টি পুলিশকে কেউ জানায়নি।’