সীতাকুণ্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা

0

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্র্যাজেডি এখন দেশের প্রধান আলোচ্য বিষয়। প্রায় অর্ধশত মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু জাতিকে শোকাহত করেছে। সব থেকে মর্মান্তিক ৯ ফায়ারম্যানের মৃত্যু। যারা জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে গেছেন অনেক প্রাণ, অনেক সম্পদ, আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জানাই।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কদমরসুল এলাকায় ২৪ একর জমির ওপর ওই কনটেইনার টার্মিনালে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট সারা রাত চেষ্টা করে সকালে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু বারবার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ৯ জন ফায়ারম্যানসহ ৪৯ জন প্রাণ হারায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কেমিক্যাল বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের ১৪ জনের একটি দল রবিবার চট্টগ্রামে ঢাকা থেকে রওনা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে চারটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। যদিও ওই কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের কেমিক্যাল ছিল বা রয়েছে সে ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস রবিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো ধারণা পায়নি।
বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল ১২৫ জন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি সেদিন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার বনেদি এলাকা চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। গত বছর জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের মালিকানাধীন হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ছয়তলা কারখানা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃত্যু হয়।
আগুন লাগার এসব ঘটনার পর নানা খবরের সঙ্গে বেরিয়ে আসে নানা অসংগতিও। সবারই জানা, বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ন্ত্রণ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এসব এলাকায় অগ্নিনিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নেওয়া থাকে কি না সে প্রশ্নটি সবার আগে চলে আসে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসবে, সেটি হচ্ছে অগ্নিনিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সেখানে ছিল কি না। থাকলে কেন আগুন ছড়িয়ে পড়ল? এ ধরনের ডিপোর জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয়। অনুমতি দেওয়ার আগে নিশ্চয়ই অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। কারণ এখানে থাকবে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। নিয়ম মেনেই যদি অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে, কারা দিয়েছিল সেই অনুমতি। মনে রাখতে হবে, যেখানে রাসায়নিক, সেখানেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা। তাই নিরাপত্তার দিকটি অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
আমরা মনে করি, বারবার আগুনে মানুষ পুড়বে আর সাকার কিছু টাকা দেবে, তদন্ত কমিটি করে থেমে যাবে এটা চলতে পারে না। আমরা চাই, রাসায়নিক দ্রব্যের জন্য নিরাপদ এলাকা করা হোক। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটলেও ব্যাক প্রাণহানী ঘটবে না।