গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বিপাকে অভয়নগরের খামারিরা

0

 

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) ॥ দফায় দফায় গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অভয়নগর উপজেলার খামারিরা। এক মাস আগে যে গমের ভুষির বস্তা (৩২ কেজি) ১৮৫০ টাকা ছিল, তা এখন ২ হাজার ৪শ’ ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকে পরিমাণ মতো খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে গবাদিপশুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন। যদিও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজি এবং সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সকল পণ্যের দাম বাড়ছে।
অভয়নগর উপজেলার বাগদাহ্ গ্রামের কণা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান জনি দীর্ঘদিন যাবৎ গরু পালন করে আসছেন। খামারটি এতদিন ভালো চললেও সম্প্রতি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। এর প্রধান কারণ গবাদি পশুর দানাদার খাবারের উচ্চমূল্য। যে কারণে বাধ্য হয়ে গরুকে এখন কম খাবার দিতে হচ্ছে তাকে। জনি বলেন, এখন আর গরু পালনের কোনো সুযোগ নেই। গত একমাস আগে যে গমের ভুষি কিনেছি ১৮শ’৫০ টাকায়, এখন তা কিনতে হচ্ছে ২৪শ’ ৫০ টাকায়। এছাড়া বাজারে এক মাস আগে তীর কোম্পানির যে ভুষির দাম ছিলো ১৫শ’ টাকা, এখন তা ১৯শ’ ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফ্র্রেশ কোম্পানির ভুষির দাম এক মাস আগে ছিলো ১৩শ’ ৯০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ ৪০ টাকায়। এক মাস আগে যে বুটের ভুষি ৮শ’ ৪০ টাকা দর ছিল, এখন তা ১ হাজার ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অটো কুড়ার এক মাস আগে দাম ছিলো ১৬শ’ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৮শ’ টাকায়। ১৭শ’ ৫০ টাকার গম এখন ২১শ’ টাকা। ৪০ কেজির মুগের ভুষি আগে ১ হাজার ৩শ’ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে সাড়ে ১৮শ’ টাকায়। আর সয়ামিলের ভুষির দাম এতো বেশি যে এখন গরুকে তা খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলাসহ যশোরাঞ্চলে উন্নতজাতের ঘাস চাষের বিষয়টি এখনো খুব একটা বাণিজ্যিকভাবে ছড়ায়নি। যে কারণে এ অঞ্চলের খামারিরা খড় ও দানাদার খাবার খাইয়েই গবাদি পশু পালন করে থাকেন। তবে দানাদার খাবারের বাজার টানা উর্ধ্বমুখি থাকায় অনেকেই খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে আবার গরু বিক্রি করে খামার ছোট করছেন। আন্ধা গ্রামের গবাদী পশুর খামারি পঙ্কজ রায় বলেন, তার খামারে ৮টি দুধের গাভী আছে। তার অভিযোগ, গো-খাদ্যের দাম বাড়লে সিন্ডিকেটের কারণে দুধের দাম সে অনুপাতে না বাড়ায় এখন লোকসানে আছেন। একই অবস্থা গোটা উপজেলার খামারিদের। অনেকে গরু বিক্রি করে খামার ছোট করে আনছেন। খামারিদের অভিযোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। কোথাও কোনো তদারকি বা মনিটরিং নেই। হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শ’ শ’ খামারিকে পথে বসতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নওয়াপাড়া বাজারের একজন গো-খাদ্য বিক্রেতা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে যখন গমের দাম বাড়লো, সেই থেকে গমের ভুষির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেল। এছাড়া যখনই সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো, সেসময় থেকে সয়ামিলের ভুষির দামও বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে খুব বেশি ভুট্টার আবাদ হয় না। এ কারণে যেসব এলাকায় ভুট্টা উৎপাদন হয় সেসব এলাকা থেকে সরাসরি বিভিন্ন ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভুট্টা কিনে নিচ্ছে। এতে করে ভুট্টার বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। অভয়নগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার দে বলেন, সারাবিশ্বেই খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কীভাবে খামারিদের টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এজন্য খামারিদের উন্নত জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব খামারি আগামী কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করছেন তাদের জন্য ইউরিয়ার মোলাসেস তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।