বাগেরহাটে ধান সংগ্রহে ধীরগতি, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটে ধীরগতিতে চলছে সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম। সারাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর ২৪ দিনেও বাগেরহাটে পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। এখনও কোনো কোনো উপজেলায় ধান সংগ্রহ কমিটির সভাও হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে জেলার বেশিরভাগ কৃষক ধান মাড়াই শেষে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে জেলায়। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে এখনও সময় রয়েছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানাযায়, চলতি অর্থ বছরে বাগেরহাট জেলায় ৮ হাজার ৬৪৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১৫৪৯ টন, মোরেলগঞ্জে ১০৪৩টন, রামপালে ৬২৯ টন, শরণখোলায় ৬৫টন, ফকিরহাটে ১২৩৬ টন, মোল্লাহাটে ১২০৬টন, কচুয়ায় ১১১০ টন এবং চিতলমারী উপজেলায় ১৮০৭ টন রয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার কর্তৃৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করার ১৯ দিন পরে ১৭ মে বাগেরহাটে ধান সংগ্রহ শুরু হয়। গত ২২ মে পর্যন্ত জেলায় মাত্র ১৩৪ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালেও জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ২০২০ সালে ৬৪১৮ টনের স্থলে ৫৯৭৬ টন, ২১ সালে ৮৫৩০ টনের স্থলে ৬৭৩৭ টন ধান সংগ্রহীত হয়। এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য বিভিন্ন নিয়ম কানুন ও হয়রানির কারণে সেখানে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। কচুয়া উপজেলার কৃষক আমজেদ আলী মোল্লা বলেন, এবছর প্রায় ১১০ মণ ধান হয়েছে। বছরের খোরাক রেখে ঈদের আগেই ৭৫০ টাকা দরে ৭০মণ ধান বিক্রি করেছেন। তিনি শুনেছি সরকারি গুদামে ১০৮০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। কিন্তু কীভাবে বিক্রি করতে হবে, সে সিস্টেম তিনি জানেন না।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, এলাকার ধান কেটে বিক্রি করার অন্তত ২০ দিন পরে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বেশিদামের জন্যে এতদিন অপেক্ষা করলে, পাওনাদারদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। তাই কম বা বেশি যা পাওয়া যায়, লোকসান স্বীকার করে আগেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার পাতিলা খালি গ্রামের কৃষক মাহাবুবুল আলম কাজল বলেন, ফড়িয়া আর মধ্য স্বত্ব ভোগীদের কারণে প্রতি বছর প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
স্থানীয় এক কৃষক জানান, সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত হওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। বাগেরহাট সদর এবং ফকিরহাট উপজেলায় অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তারপর লটারি হয়, সেখানে টিকলে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের কাছে সময় মত ধান বিক্রি করা যায়। একজন এনজিও কর্তকর্তা বলেন, অন্যান্য উপজেলায় উপজেলা অফিস থেকে খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে তালিকা প্রদান করে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ কৃষকের তালিকা যায়, ব্যক্তি সম্পর্ক ও রাজনৈতিক বিবেচনায়। যারা কৃষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, তাদেরও ধান বিক্রয় করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এম.এম তাহসিনুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের কারণে তাদের হাতে সময় রয়েছে, শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করা হবে। তিনি আশা করেন, এবার জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। এছাড়া জেলায় লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ৬৬৮৫ টন চাল সংগ্রহের জন্য ২৪ জন মিলারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এই মৌসুমে বাগেরহাটে ৫৯ হাজার ২ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। শতভাগ কৃষক তাদের ধান মাড়াই সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।