সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ, কালীগঞ্জে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রোদে নিয়ে মানববন্ধন!

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মানববন্ধন করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে গত এক সপ্তাহ ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রখর রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন করানো হলেও জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অনেকটা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। জোর করে পালন করা মানববন্ধন কর্মসূচি বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত বা দায়ী অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত স্বার্থ তো দূরের কথা শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে কোন মন্ত্রী কিংবা সচিবের ভিআইপি প্রটোকলেও ব্যবহার করা যাবে না। অথচ কালীগঞ্জে এক জনপ্রতিনিধির নামে কথিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ করতে ঢালাওভাবে স্কুল, কলেজ, ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক মানববন্ধন কর্মসূচি করানো হচ্ছে। এই বেআইনি কাজে বাধ্য করতে কালীগঞ্জে সরকারি দলের কতিপয় নেতার চাপ রয়েছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। অনেকে বলছেন মানববন্ধন করাতে প্রতিষ্ঠান প্রতি ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এই লোভ সামলাতে না পেরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নীতিমালা লঙ্ঘন করে কালীগঞ্জের প্রধান শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে মানববন্ধন করাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, সরকারি দলের লোকজনের হুমকির কারণে তারা এই মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা বলছেন, তারা কোন মানববন্ধন করতে চাপ দেননি। বৃহস্পতিবার সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাট বারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলহাজ¦ আমজাদ আলী ও ফাইজুর রহমান মহিলা কলেজ, শহীদ নুর আলী কলেজ, শোয়াইবনগর মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনের কারণ জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদ সাত্তার তরু বলেন, সবাই করছে তাই শিক্ষার্থীরাও করেছে। তিনি দাবি করেন রোদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাঁড় করানো হয়নি। কালীগঞ্জের রুস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা এ্যাসেম্বলি শেষ করা মুহূর্তে সুশান্ত কুমার পাল নামে একজন শিক্ষক ব্যানার ধরে মানববন্ধন করতে বলেন। পরে পড়ে দেখি এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মানববন্ধন করানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে কেন মানববন্ধন করা হলো এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি কোন কলেজ বা স্কুলের প্রধানরা।
বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মধুসূদন সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমি সামাজিক গণমাধ্যমে দেখেছি। বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তাসলিমা বেগম বলেন, ‘এমন মানববন্ধন করলে সমস্যা কি? মন্ত্রণালয়ের এমন কোন আদেশ আছে নাকি?’ তিনি সাংবাদিকদের উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনারা কী করছেন?’ অবশ্য পরে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে এ ধরণের মানববন্ধন করা বেআইনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর জেনেছি। তবে মানববন্ধন করতে আমার কাছে কেউ অনুমতি গ্রহণ করেনি বা কেউ অভিযোগ করেনি।’ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন কর্মসূচি পালন করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও তিনি জানান।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, ‘আমি শুনেছি শুধু শিক্ষকরা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। যদি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয় তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, ‘তুই শিবির করিস’ এই কথা বলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার সরকারী মাহতাব উদ্দীন কলেজের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে চড়থাপ্পড় মারেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত ও বেরসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত সংবাদ ‘মিথ্যা’ প্রমাণ করার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলার সকল কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করানো হচ্ছে বলে নতুন করে অভিযোগ উঠেছে।