বাবার পথে ইমরানও, দুখি মায়ের অপেক্ষার শেষ নেই

0

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘারপাড়া॥ বছর পাচেঁক আগে বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বাধ্য হয়েই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছোট দুই ভাই আর মাকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এমন একটা অবস্থা যে ভাত খাবে না পড়া লেখা করবে সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলো ১৯ বছরের যুবক ইমরান হোসেন। ¯œাতকের পড়ালেখা বাদ দিয়েই সে কেবল ছুটছিলো একটা চাকরির পিছনে। হঠাৎ করেই সে সোনার হরিণের দেখা পায় সেনাবাহিনীর চাকরি পেয়ে। তখন থেকেই সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ছোট দুই ভাইকে মানুষ করবে। মাকে ভালো রাখবে। কিন্ত সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। বাবার মত তাকেও সড়ক দুর্ঘটানায় প্রাণ দিতো হলো। ঈদের ছুটি কাটাতে মোটরসাইকেলযোগে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসছিলেন ইমরান। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত ইমরান (২৪) বাঘারপাড়ার দরাজহাট গ্রামের মৃত মানিক মোল্যার ছেলে।

শনিবার সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেল

নিহত সেনা সদস্য ইমরানের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইমারান ২০১৭ সালের শেষ দিকে সেনা বাহিনীর চাকরিতে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের ৪ ইঞ্জিনিয়র ব্যাটালিয়ন হতে ৫ আরই ব্যাটালিয়নের আওতায় ঢাকার পোস্তগোলায় কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার বিকেলে তার ঈদের ছুটি মঞ্জুর হয়। এদিন সন্ধ্যায় ইমরান ঢাকায় বসবাসরত তার ফুপুর বাসায় ওঠেন। সেহরি খেয়ে শনিবার ভোরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। খুলনা- ঢাকা মহাসড়কে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার মাজড়ায় পৌঁছালে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়। সকাল সাতটার দিকে ঢাকাগামী একটি প্রাইভেট কারের সাথে ইমরানের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মারাত্মক আহত ইমরানকে স্থানীয়রা গোপালগঞ্জ একশ শয্যা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গোপালগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক আবু নাইম মোঃ মোফাজ্জেল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে আছে।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলের মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে গেছেন নিহত ইমরানের মা তাসলিমা বেগম(৫০)। বিলাপ করে তিনি বলেন, সেহরি খেয়ে ইমরান ফোন দিয়ে বলে মা আমি রওনা হচ্ছি। এসে ঈদের বাজার করবো। ‘আমি কাকে নিয়ে ঈদ করবো’- এ কথা বলেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন মা।
নিহত ইমরানের ছোট ভাই রানা দুপুর তিনটার দিকে জানিয়েছেন, তারা দুই ভাই গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে অবস্থান করছেন। সেখানে লাশের ময়না তদন্তের কাজ চলছে।