মনিরামপুরে সাংবাদিক রাহুল ও এক ব্যবসায়ীকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল চরমপন্থি নেতা কিরনের

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের মনিরামপুরের সাংবাদিক রাহুল রায় ও ওষুধ ব্যবসায়ী উত্তম কুমারকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন ডিবি পুলিশের হাতে কথিত চরমপন্থি নেতা কিরন। তার রয়েছে একাধিক নাম। সেগুলো হচ্ছে তিল্লক, বাসুদেব সাহা, তপন, বাদল ও মাহমুদুর রহমান। এই দুজনকে ২২ এপ্রিল হত্যার পরিকল্পনা ছিলো তার। কিন্তু ডিবি পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় তার হত্যার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তবে কিরন জামিনে থেকে মুক্তি পেয়ে বের হলে ফের অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডিবি।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, কিরনকে ধরতে তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত মেম্বার উত্তম সরকার ও মনিরামপুরে মনোহরপুর গ্রামে কথিত চরমপন্থি প্রকাশ মল্লিক ওরফে ব্রিটিশ হত্যার নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী ও হুকুমদাতা কিরনকে ধরতে তারা বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন। অত্যন্ত ধূর্ত ও মেধাবী কিরন। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্সে লেখাপড়া করেছেন এই চরমপন্থি। তারা যে তাকে খুঁজছেন তা টের পেয়ে যান কিরন। কিশোরগঞ্জের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ডিবি পুলিশের তৎপরতা জেনে যাওয়ায় স্ত্রীসহ রাজধানী ঢাকায় পালিয়ে যান তিনি। পরে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে অবস্থান শনাক্তের পর গত ২২ এপ্রিল সকালে তারা পটুয়াখালীর পুরাতন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হন। আটক কিরনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে জানা যায়, তিনি মেম্বার উত্তম সরকার ও চরমপন্থি ব্রিটিশকে হত্যার মূল হোতা। কী কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাও স্বীকার করেছেন তিনি। এছাড়া তার পরবর্তী টার্গেট মনিরামপুরের সাংবাদিক রাহুল রায় ও ওষুধ ব্যবসায়ী উত্তম কুমার ছিলেন বলে কিরন ডিবি পুলিশকে জানিয়েছেন ।
কী কারণে এই দুজনকে হত্যার পরিকল্পনা ছিলো এমন জিজ্ঞাসাবাদে কিরন ডিবি পুলিশকে জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে তিনি রাহুল রায়ের ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গত ২২ এপ্রিল তাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু আটক হওয়ায় তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মনিরামপুরের হাজিরহাট বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী উত্তম কুমারের কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন কিরন। কিন্তু উত্তম কুমার চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকেও একইদিনে অর্থাৎ ২২ এপ্রিল হত্যার পরিকল্পনা ছিলো কিরনের।
ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার জানান, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত ও চাঁদাবাজি বিষয়ে সাংবাদিক রাহুল রায়ের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন কিরন। ওই এলাকার অন্তত ২০ জনের কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন এই চরমপন্থি। রাহুল রায় বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানাতে ওইসব লোককে বলেছিলেন। এ কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন কিরন।
এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার উত্তম সরকারের কাছে চাঁদার ৭৫ হাজার টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করেন কিরন। আর সহযোগী চরমপন্থি ব্রিটিশকে হত্যা করা হয় অস্ত্র দিতে অস্বীকার করায়। তিনি বলেন, কিরনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন, তাদের আধ্যাত্মিক চরমপন্থি নেতা মহিতোষ। তিনি থাকেন ভারতে। এই মহিতোষ ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েছিলেন কিরনকে। এর মধ্যে সহযোগী অনুপমকে ২টি, ব্রিটিশকে ২টি ও বুলেটকে বাকী অস্ত্রটি দেন কিরন। কিন্তু পরবর্তীতে ফেরত চাইলে অস্বীকার করেন ব্রিটিশ। এ কারণে তাকে হত্যা করেন কিরন।
ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কিরন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হলে ফের একই ধরনের কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।