আবারও বাড়লো সয়াবিন তেলের দাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দুই সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর আবারও বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সাপ্লাই কম থাকায় এবং ও চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার না মেলায় তেলের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
রোববার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর নিউ মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হোসেন স্টোরের বিক্রয়কর্মী আরিফ অভিযোগ করে বলেন, ‘তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। কোম্পানিগুলো ঠিক মতো সাপ্লাই দিচ্ছে না। চাহিদা মতো অর্ডারের মালামাল না দিয়ে বলছে, দু-একদিন পর দিচ্ছি। বাজারে সাপ্লাই কম দেওয়ার পাশাপাশি দামও বেশি নিচ্ছে তারা।’
একই মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী শারমীন স্টোরের আব্দুল জলিল বলেন, ‘গত ৩-৪ দিনে আবারও তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটারে বেড়েছে ৫-৬ টাকা। তবে বোতলের তেলের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। রোজায় বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রচুর ইফতারি ভাজা হয়। আর এসব ভাজা হয় খোলা তেল দিয়ে। সে কারণে খোলা তেলের দাম বেশি বেড়েছে।’
ভোজ্যতেলের বাজারের অস্থিরতা কমাতে আমদানি-পাইকারি- খুচরোসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। এরপর নির্ধারণ করা হয়েছে তেলের নতুন দাম। তারপরও বাজারে বেশি দামে সব ধরণের ভোজ্যতেল বিক্রি করছে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা।
নিউ মার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজিব সয়াবিন তেলের বাজারদর বিষয়ে বলেন, ‘খোলা এবং বোতলজাত সব ধরণের সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়ছে। রোজার আগেও এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৬৫ টাকা। সেখান থেকে ৫ টাকা কমে ১৬০ টাকায় নেমেছিল। গত দুই তিন ধরে আবার দাম বেড়েছে। এখন আবার ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকায় বিক্রি করছি। দুই লিটার তেলের দাম ছিল ৩২৫ ছিল, এখন ৩৩২-৩৩৪ টাকা আর পাঁচ লিটার বিক্রি করেছিলাম ৭৬৫-৭৭০ টাকায়। এখন তা আবার ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’
তেলের বাজারে খোঁজ নিয়ে এবং পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভালো মানের খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬২-১৬৫ টাকায়। এই তেলই গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৫৭ টাকা কেজিতে।
আবার কেন দাম বেড়েছে, জানতে চাইলে ব্যবসায়ী রাজিব জানান, ‘এই ব্যাপারে যারা তেল সরবরাহ করছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। কোম্পানির লোকদের কাছে জানতে চাইলে ওনারা বলেন, দাম বাড়তে পারে তাই তেলের সাপ্লাই কম। এক ডজন অর্ডার দিলে কোম্পানি থেকে ৫-৬ বোতল তেণ দিচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী তেল সাপ্লাই না দিয়ে তারা গড়িমসি করছে। এটা আসলে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা।’
বাজারে আসা একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রোজিনা ইয়াসমিন তেলের দাম শুনে বলেন, ‘রোজার তিন দিন আগে পাঁচ লিটার তেল কিনেছিলাম ৭৬০ টাকায়। আজ চাইছেন ৭৮০ টাকা! এক সপ্তাহের মধ্যেই ২০ টাকা বেড়ে গেল? এভাবে জিনিস-পত্রের দাম সপ্তাহান্তে বাড়লে আমরা চলবো কী করে?’
প্রসঙ্গত, ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত মাসে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে মাত্র ৫ শতাংশ বহাল রেখে ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রিতে থাকা সব ধরনের ভ্যাট তুলে নেয় সরকার। এতোদিন ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য ছিল। পরে গত ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে সয়াবিন তেলের দাম কমিয়ে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা (আগে ছিল ১৪৩ টাকা), বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা (আগে ছিল ১৬৮ টাকা) এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল ৭৬০ টাকা (আগে ছিল ৭৯৫ টাকা) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
এদিকে সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাম কমালেও ব্যবসায়ীরা কৌশলে তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্যেও এর প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা, রামপুরা, নিউমার্কেট ও মিরপুর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকারি এ সংস্থাটি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ৯ এপ্রিল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খুচরা এক লিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৬৮ টাকা। এক সপ্তহ আগে ছিল ১৬০-১৬২ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬২ টাকা যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫৫ টাকা।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম বেড়েছে- এমন অজুহাতে সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়াতে চান আমদানি ও উৎপাদনকারীরা।
গত বুধবার (৬ এপ্রিল) ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিকারক ও মিল মালিকদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৈঠকে এ দাবি করেন তারা। এসময় বৈঠকে সিটি, মেঘনা, এস আলম, বসুন্ধরা ও টি কে গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভোজ্যতেলের বাজার সমন্বয় করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান।
তবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের পর মে মাসে এ দাম সমন্বয় নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। অথচ নিষেধ করার পরও বাজারে দিন দিন বাড়ছে তেলের দাম।
এ বিষয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, মিলে দাম স্বাভাবিক থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরো বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে। এব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে পাঁচ পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে
তিনি আরো বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি দাম নিলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর্থিক দণ্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। এছাড়া সিন্ডিকেট করে কেউ যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও বিশেষ আইনে মামলা করা হবে। আমরা সব ব্যবসায়ীকে আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা করা এবং সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলার অনুরোধ জানাই।