সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনা করবে সরকার

0

কাজী সোহাগ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ওভার দ্য টপ (ওটিটি) নিয়ন্ত্রণে খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনা করবে সরকার। ব্যাপক বিতর্কের কারণে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে পর্যালোচনায় নীতিমালাটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, অতীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রেও একই সুরে কথা বলেছে সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে  নড়েনি। ওই আইন নিয়ে এখনো নানা বিতর্ক রয়ে গেছে। খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনার বিষয়টি কাছে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গত বৃহস্পতিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিটিআরসির উদ্যোগে তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠান শেষে প্রতিবেদকের কাছে তিনি ওই কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, বিটিআরসি আদালতের নির্দেশে কেবল একটি নীতিমালা দাঁড় করিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই নীতিমালার ওপর জনমত চাওয়া হয়েছে। কিন্তু খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত কিছু নয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসবো। তাদের বক্তব্য শোনা হবে। তারপর খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, অথচ এখনই অনেকে নানা ধরনের সমালোচনা করছেন। বিতর্ক তৈরি করছেন। মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। আসলে এখন যারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন তারা না জেনে না বুঝে বলছেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে নানা ধরনের কথা বলা হয়েছে। তখন বার্তা দেয়া হয়েছিল এতে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হবে। বাস্তবে কি তাই হয়েছে? হয়নি। এই নীতিমালা নিয়েও এরকম কিছু হবে না। স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়েই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। এ নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ নেই। এর আগে খসড়া নীতিমালা প্রত্যাহার চেয়ে ৪৫ আন্তর্জাতিক সংস্থা দাবি জানায়। পরে বিটিআরসির পক্ষ থেকে তাদের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়। বিটিআরসির যুক্তি-রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে উচ্চ আদালত। বিটিআরসির করা ওই নীতিমালার প্রস্তাবিত নাম দেয়া হয়েছে ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফরমস’। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি তাদের ওয়েবসাইটে ১৬ পৃষ্ঠার খসড়া নীতিমালাটি ইংরেজিতে প্রকাশ করে। প্রথমে ১৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই খসড়া নীতিমালার ওপর মতামত চাওয়া হয়। পরে আবার তার মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ই মার্চ করা হয়। এর মধ্যে খসড়া নীতিমালা নিয়ে মানবজমিনে ২৪শে ফেব্রুয়ারি বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয়। এর পরদিন থেকেই বিটিআরসির ওয়েবসাইট থেকে খসড়া নীতিমালাটি সরিয়ে ফেলা হয়। সেখানে শুধু মতামত চেয়ে দেয়া নোটিশটি ঝুলিয়ে রাখা হয়। এদিকে খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনার ঘোষণাকে অনেকটা স্ট্যান্ডবাজি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ। মানবজমিনকে তিনি বলেন, এখানে মন্ত্রী মহোদয় স্টেকহোল্ডার বলতে কি বুঝিয়েছেন তা আমরা জানি না। শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বা ফেসবুক বা ইউটিউব বা ওটিটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করলে হবে না। এতে বিতর্ক থেকেই যাবে। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন সেই বৃহত্তর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বসতে হবে। অতীতে আইন করার আগে সব সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসা হয়নি। আবার বসলেও তাদের কোনো মতামত গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, এই নীতিমালার ক্ষেত্রে বিটিআরসি ‘মাসলম্যান’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে। তারা কাউকে আসলে কেয়ার করছে না। খসড়া নীতিমালার মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলো যদি আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। এটা যেন না করা হয়। তাছাড়া এটা করার কোনো অধিকারও নেই বিটিআরসির। বিটিআরসির খসড়া নীতিমালায় নানা ধরনের বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কোনো ধর্মের অনুসারীদের আহত করে বা আঘাত দেয়-এমন কোনো মন্তব্য বা বিষয় প্রচার করা যাবে না। সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, এমন কিছু করা যাবে না। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করে মন্তব্য বা কটূক্তি করা যাবে না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে কোনো মন্তব্য এবং খবর প্রচার বা পোস্ট করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই বিষয়গুলোকে ‘কমন’ বা সাধারণ ইস্যু হিসেবে দেখানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এসব পোস্ট বা প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই বিষয়গুলোতে ফেসবুক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষসহ সব সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইনে বিনোদনের প্ল্যাটফরমগুলোকেও সজাগ থাকতে হবে। এ ছাড়া নেটফ্লিক্স, হইচই এবং অ্যামাজন প্রাইমসহ বিনোদনের ওটিটি প্ল্যাটফরমগুলোতে অশ্লীল এবং অনৈতিক কোনো কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না, বলা হচ্ছে নতুন নীতিমালার খসড়ায়। নীতিমালায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধু দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে- এ ধরনের মন্তব্য, খবর বা কন্টেন্ট সামাজিক মাধ্যমে বা বিনোদন প্ল্যাটফরমে প্রচার করা যাবে না। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এটি না মানলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।