থমথমে শ্রীলঙ্কা অচল জীবনযাত্রা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ থমথমে শ্রীলঙ্কা। দেশজুড়ে সরকারের দেয়া ৩৬ ঘণ্টার কারফিউতে জীবনযাত্রা অচল। তার ওপর শুক্রবার দিনশেষে সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন
প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। ঘরে বিদ্যুৎ নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকট। এক কথায় সেখানকার মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিবাদের যে ভাষা কারফিউ, জরুরি অবস্থা জারি করে তাও বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এর অধীনে সন্দেহজনক যে কাউকে গ্রেপ্তার করে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বিচারহীনভাবে আটক রাখতে পারবে সেনাবাহিনী। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করে তার বাসার সামনে বিক্ষোভ করার পর প্রেসিডেন্ট কঠোর হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে দ্য উইক।
খবরে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার রাজাপাকসের বাসভবনের বাইরে হিংসাত্মক বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। সেদিন শত শত বিক্ষোভকারী সেখানে জড়ো হয়ে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি বর্তমানে যে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে তার জন্য প্রেসিডেন্টকেই দায়ী করছেন দেশের মানুষ। বিক্ষোভে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে তা সহিংস হয়ে ওঠে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের হামলা-পাল্টা হামলায় বহু মানুষ আহত হন। বেশ কয়েকটি গাড়িতে দেয়া হয় আগুন। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হলো শ্রীলঙ্কায়।
এদিকে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এ ঘটনাকে ‘চরমপন্থিদের কাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে অন্তত ৫৩ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শ্রীলঙ্কায় এখন বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট চলছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে। এমন অবস্থায় এ বিক্ষোভকে একটি বড় ধরনের সরকারবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদিও ২০১৯ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন রাজাপাকসে। তিনি তখন স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়ভাবে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সমালোচকরা এ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন। কারণ প্রেসিডেন্টের ভাই ও ভাতিজারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আছেন। এটিকেই দেশটির বর্তমান অবস্থার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলছেন অনেকে।
যদিও সরকার অবশ্য বলছে যে, করোনা মহামারির কারণে পর্যটন খাত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে চার্চগুলোতে সিরিজ হামলার ঘটনাও পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি জানাচ্ছে, সমপ্রতি শ্রীলঙ্কান রুপির অবনমন না করাতেও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে যায়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের মতো থাকলেও এখন তা দুই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য আছে মাত্র তিনশ’ মিলিয়ন ডলার। এমনকি আমদানিনির্ভর দেশটির জন্য এখন বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীল প্রবাহও নেই। শ্রীলঙ্কার হাতে এখন আর তেলের মতো জরুরি দরকারি পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত ডলার নেই। এর ফলে আরও বেশি সময় ধরেই সেখানকার মানুষজনকে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। সামনের দিনগুলোতে এটি ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। তেলের পাম্পগুলোতে লাইন দীর্ঘ হচ্ছে।