খানজাহান আলী থানা এলাকায় আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং

0

শেখ বদরউদ্দিন, ফুলবাড়ীগেট (খুলনা)॥ গত কয়েক বছর ধরে কিশোর অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, সিগারেট খাওয়া, প্রভাব বিস্তারের জেরে হরহামেশা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারধর, দলবেধে হামলা, এমনকি বাড়ির ভিতর ঢুকে পিতামাতার সামনে থেকে তুলে নিতেও দ্বিধা করছেন না তারা। গত এক বছরে খানজাহান আলী থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে ব্যাপক। খুলনার চাঞ্চল্যকর বেশ কয়েকটি কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মূলত ছোট অপরাধ থেকে তাদের যাত্রা শুরু। আস্তে আস্তে ইভটিজিং বা বখাটেপনা করলেও পরবর্তীতে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কেনা-বেচা, ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন কিশোররা। এমনকি দলবেঁধে বিরোধীপক্ষের ওপরও হামলা করছেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’। এমন চক্রের সংখ্যা নেহাত কমও নয়। অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে সমাজে ‘বড় ভাই’ পরিচিতি পেতে এসব কিশোর বা উঠতি বয়সী তরুণকে নানা অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছেন কয়েকজন ব্যক্তি। কিশোর অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’ বা সংঘবদ্ধ অপরাধের ভয়ঙ্কর চিত্র সামনে এলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কিশোর অপরাধের প্রবণতা কমানো যায়নি, বরং বেড়েছে। সম্প্রতি টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছেন কিশোর-তরুণরা। এক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গ্যাং। কিশোর গ্যাংয়ে জড়িতদের অধিকাংশই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের অপতৎপরতা রোধে কাজ করছে প্রশাসন। এরই মধ্যে থানা এলাকাতে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর অপরাধীদের তালিকা করা হচ্ছে বলে সুত্রে জানা যায়। তালিকা ধরে খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং, ছিনতাইসহ বড় অপরাধে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। গত ২০ মার্চ বেলা সাড়ে ১২ টার সময় গিলাতলা দক্ষিনপাড়ার বালিরঘাট রোডের ইকতিয়ার এর কিশোর পুত্র রাহুল সহ তার ৩ বন্ধুকে পুর্বের কথাকাটাকাটির জেরকে কেন্দ্রু করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে অভিভাকদের সামনে থেকে জোরপুর্বক তুলে নেওয়ার সময় স্থানিয় এক গনমাধ্যম কর্মি তাদেরকে বাধা প্রদান করেন এবং কেন তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তার উপর চড়াও হয় কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। এক পর্যায়ে নিজের জীবন বাজি রেখে তাদের কাছ থাকা দেশিয় অস্ত্র চাইনিছ কুড়াল কেড়ে নেন তিনি। এ সময় এলাকাবাসি এগিয়ে এলে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা পালিয়ে যায়। স্থানিয়রা জানান খানজাহান আলী থানা রোডের গাফফারফুড মোড় বালিরঘাটে প্রতিদিন বিকালের পর থেকে গভীররাত পর্যন্ত উঠতি বয়সের কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা আড্ডা জমায়, থানা পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান করলেও তাদের আড্ডা বন্দ হয়নি। গিলাতলা যুব সংঘের সাধারন সম্পাদক মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন এ মুহূর্তে গিলাতলা এলাকাতে কিশোর গ্যাং ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। এটা এখনই বন্ধ করা দরকার। কিশোর অপরাধীরা এখন শুধু ইভটিজিং কিংবা ছিনতাই করছে না; ধর্ষণ, অপহরণ ও মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ছে। তবে, কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ করা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়, পরিবার-সমাজসহ সব সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে হবে। খানজাহান আলী থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ^াস বলেন এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার কাজ নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার দৌলতপুর জোন মোঃ জাফর আহম্মেদ বলেন, রাজনীতির দুষ্টচক্রে নিজের স্বার্থে কেউ কিশোর গ্যাং গড়ে তুললে পুলিশের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।