সমবায় মার্কেট নির্মাণের অজুহাতে রাজগঞ্জে বন্দোবস্ত জমি দখল করে ভবন ও স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

0

মজনুর রহমান,মণিরামপুর (যশোর) ॥ মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারে সমবায় মার্কেট নির্মাণের অজুহাতে অন্যের জমি দখল করে দুইতলা ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফসহ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার দুপুরের মধ্যে ভবন ও স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
জানা যায়, উপজেলার হানুয়ার গ্রামের মৃত নূরুল হক বিশ^াস ১৯৬০ সালে রাজগঞ্জ বাজারে ১৯৪ নং মোবরকপুর মৌজার ১ নং খতিয়ানের ১২ শতক জমি সরকারের কাছ থেকে ৩০ বছর মেয়াদী বন্দোবস্ত নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে নয় ছেলেসহ পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তিতে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ এবং ২০২০ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত বন্দোবস্ত নবায়ন করেন। ইতোমধ্যে নূরুল হকের মৃত্যুর পর সরকার ওই ১২ শতক জমি তার নয় ছেলে ও স্ত্রীর নামে রেকর্ড (নামপত্তন) করে দিয়েছে। ওই জমির ওপর দুই তলা একটি ভবন রয়েছে। পাশেই রয়েছে ক্রয়কৃত আরও তিন শতক জমি।
নুরুল হকের ছেলে আয়নাল হক, আজহারুল হক, আশরাফুল হক, আসাদুল হক জানান, দুইতলা ভবনের পাশের ওই জমিতে তারা সম্প্রতি পাকা আটটি দোকানঘর নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু তাদের অভিযোগ রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ, ঝাঁপা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক সোহেল রানা, শিমুল হোসেন ও জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র গত ১৫ মার্চ রাতে ওই আটটি ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় নুরুল হকের ছেলে আসাদুল হক প্রথমে থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ কোনো প্রতিকার করেননি। ফলে ১৪ মার্চ আসাদুল হক যশোর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শরণাপন্ন হন। বাদী পক্ষের আইনজীবী আবদুল লতিফ জানান, বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইমুজ্জামান,শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে আদেশ দেন। কিন্তু বাদী আসাদুল হকের অভিযোগ, পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ, ঝাঁপা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক সোহেল রানা, জালাল উদ্দিন, শিমুল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি শুক্রবার রাতে ওই জমি দখলের পর সেখানকার দুইতলা ভবনটি ভাঙা শুরু করেন। শনিবার সকাল থেকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে দুপুরের মধ্যেই দুইতলা ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ জানান, জমিটি সরকারি হওয়ায় উন্নয়নের স্বার্থে এখানে একটি সমবায় মার্কেট নির্মাণের জন্য দখল করে ভবনসহ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে জমি দখল ও স্থাপনা ভেঙে দেওয়ার কোনো সরকারি আদেশ আছে কিনা এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি আবদুল লতিফ। যুবলীগের আহ্বায়ক সোহেল রানা জানান, এলাকবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে সরকারি এ জমির দখল নেওয়া হয়েছে। তবে চালুয়াহাটি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) শফিউর রহমান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান জানান, নিয়ম মেনে ভূমি মন্ত্রণালয় চলতি বছরে নুরুল হকের নয় ছেলে ও স্ত্রীর নামে অকৃষি খাস ১২ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়েছে। ফলে নতুন খতিয়ানে(২৬২১) তাদের নামে নামপত্তন(রেকর্ড) করা হয়েছে। জমি দখল ও ভবন ভাঙচুরের ঘটনা জানতে মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) নূর ই আলম সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী মাহাবুবুর রহমান জানান, অভিযোগটি তদন্ত করতে রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ বানী ইসরাইলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বানি ইসরাইল এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জেলার মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করে ডিবি পুলিশের ওসির মোবাইল ফোন নম্বর দেন। কিন্তু ওই নম্বরে কল করা হলেও কেউ রিসিভ করেননি।