কর্ণফুলী টানেল নির্মাণকাজের অগ্রগতি কতদূর?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচের সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কাজ উদ্বোধন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। সেই টানেলের কোনো কোনো অংশের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। আবার কিছু কিছু কাজ এখনো চলছে। সবমিলিয়ে প্রকল্পের বাস্তব ভৌত অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। ওই প্রতিবেদনেই টানেল নির্মাণকাজের ১০ মার্চ পর্যন্ত এ অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং চীন সরকারের সহায়তা পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মূল টানেল নির্মাণকাজের শতভাগ অর্থ চীন সরকার বহন করছে। বর্তমানে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ২৭০ চীনা নাগরিক এবং এক হাজার ১৫২ জন বাংলাদেশি কর্মরত আছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, টানেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। দুটি টিউব সম্বলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টানেলের ভেতরের ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৪ দশমিক ৯০ মিটার। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ (ভায়াডাক্ট) রয়েছে। গত ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। দুই হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম টানেল টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিংয়ের কাজ ২০২০ সালের ২ আগস্ট শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রথম টানেল টিউবের প্রয়োজনীয় নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যে দুই হাজার ৪৫০ মিটার লেনের স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুই হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর দ্বিতীয় টানেল টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিং কাজ সম্পন্ন হয়। বর্তমানে দ্বিতীয় টানেল টিউবের প্রয়োজনীয় নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় টানেল টিউবের দুই হাজার ৪৫০ মিটারের লেন স্ল্যাবের মধ্যে ৬৩৮ মিটারের লেন স্ল্যাবের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দুইটি টিউবের তিনটি সংযোগ পথের মধ্যে একটির কাজ চলমান। ইতোমধ্যে ৭৭টি হোল ড্রিলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালের ৭ মার্চ থেকে গ্রাউন্ড ফ্রিজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জেংজিয়াং শহরে টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্ল্যান্টে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্টের সবকটির নির্মাণ হয়। পরে চট্টগ্রামে সাইটে এনে নয় হাজার ৭৮৪টি সেগমেন্ট প্রথম টিউবে এবং নয় হাজার ৮৩২টি সেগমেন্ট দ্বিতীয় টিউবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্টের নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। উভয় প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে। আনোয়ারা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়ার বিভিন্ন বাংলো, দুইটি সেতু, অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ এবং অভ্যন্তরীণ রোডসহ অন্যান্য কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তের এক হাজার ৬৫২ জন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক/ব্যক্তিকে অতিরিক্ত মঞ্জুরির অর্থ বাবদ মোট ২৬৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এনামুল হক, মো. আবু জাহির, রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার, শেখ সালাহউদ্দিন, রাবেয়া আলীম এবং মেরিনা জাহান অংশ নেন।