মানুষ কেন অভাবের কথা বলতে পারবে না, প্রশ্ন গয়েশ্বর রায়ের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের মানুষ কেন তার অভাবের কথা প্রকাশ করতে পারবে না কেন, সরকারের কাছে সেই প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিরি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শনিবার (৫ মার্চ) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি সরকারের উদ্দেশে এ প্রশ্ন করেন। গয়েশ্বর বলেন, এখানে যারা পুলিশ প্রশাসনের লোকজন আছেন, হয়তোবা তারাও আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছেন। কারণ, আমাদের দাবিটা একটা মৌলিক বিষয়, এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে। ঘুস, দুর্নীতি আছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বিশেষ করে পুলিশের নাম বেশি শোনা যায়। তারপরও কয়জন পুলিশ ঘুস পান বা খান? ৯৭ ভাগ পুলিশই ঘুস পান না। এই পুলিশের লোকজন বাজারে গেলে তাদের কাছ থেকে কম নেয় না। এমন তো না আমার কাছ থেকে বেশি নেয়, পুলিশের কাছ থেকে কম নেয়। সরকারকে বলবো, মানুষ তার অভাবের কথা বলবে, সেই সুযোগ কেন থাকবে না? তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ সবাই বলে, বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এই টাকা যদি পাচার না হতো, বাংলাদেশে বিনিয়োগ হতো তাহলে অনেক শিল্পকারখানা হতো, কর্মসংস্থান হতো। আমাদের চাহিদা পূরণের পরও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম। আমাদের যুবক ভাইদের বৈধ অথবা অবৈধ উপায়ে বিদেশে যেতে হতো না। ভূমধ্যসাগরে পানিতে ডুবে মরতে হতো না।
এই বিএনপি নেতা বলেন, এই সরকারের নানা মানুষ নানা দায়িত্বে। কেউ সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে। যারা সীমান্তের দায়িত্বে তাদের কাছে অস্ত্র আছে, তারা অন্যায় দেখলেও গুলি করতে পারে না। অপরদিকে ভারতের বিএসএফ পাখির মতো আমাদের লোজকনকে একের পর এক গুলি করে মারছে। সেক্ষেত্রে কিন্তু সরকারের কোনো প্রতিবাদ নেই। তিনি বলেন, আমরা ফারাক্কার পানি অনেক আগে থেকে পাই না। এমনকি তিস্তার পানিও আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতে আমাদের ফেনী নদীর পানি মানবিক কারণে দেওয়া হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে পানি দিচ্ছি, যদিও আমাদের যথেষ্ট পানির অভাব রয়েছে। তাহলে ভারত থেকে পানি আনতে পারছি না কেন? এর জবাব কে দেবে? বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। দুটি জিনিসের দাম কমছে। একটা হচ্ছে মানুষের জীবনের দাম, অন্যটি হচ্ছে নারী ও শিশু দাম। আজকে অবুঝ শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়, মা বোনকে তার ইজ্জত হারাতে হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে ঘরে থাকলে মরতে হয়, বাইরে গেলে গুম হয়ে যেতে হয়। কখনো কখনো গুলি খেয়ে মরতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের অনেক টাকা ব্যয় হয়, অনেক লোক নিয়োগ করা হয়েছে। আগে থানাতে একটি জিপ ছিল না। এখন প্রায় সব থানার সাব ইন্সপেক্টরই গাড়িতে চড়েন। তাদের কাজ কী? জগণের নিরাপত্তা দেওয়া। তারা সরকারের লোকদের নিরাপত্তা দিতে দিতেই ব্যস্ত, সুতরাং জনগণ নিরাপত্তা পায় না। সে কারণে নারী-শিশুসহ জনগণের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে পারে না। ‘এই কেরানীগঞ্জে কতটা মাদক স্পট আছে? নিশ্চয়ই গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জানেন। থানার কর্মকর্তাদেরও না জানার কথা না। কিন্তু মাদকব্যবসা অহরহ চলছে। এদিকে একটু নজর দেন। তাতে কিছু যুবসমাজ বাঁচুক। একটি পরিবারের একজন মাদক গ্রহণ করলে সেই পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যায়। সেদিকে একটু নজর দেন। তা দেবেন না।’ তিনি বলেন, ভূমি দখল, জায়গা দখলের কোনো শেষ নেই। বৃহত্তর ঢাকা জেলার যে প্ল্যান আছে, সেখানে খাল-বিল, নিচুজমি ও কৃষিজমি ভরাট করা নিষেধ। একটা শস্য-শ্যামল এলাকা কেরানীগঞ্জ ছিল, আজকে বালুতে ঢাকা। কার জমিতে এই বালু কে ফেলে ভরাট করে? আবার বালু ভরাটের টাকা দিতে না পারলে জমি দিয়ে দিতে হয়। এতে করে কেরানীগঞ্জের মানুষ ভূমিহীন হচ্ছে। হাউজিং করে প্লট বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু জমির মালিকের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে কি না সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। এসবের কোনো বিচার নেই। আইনশৃঙ্খলাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউই নজর দেন না। তিনি আরও বলেন, এই জমি বিক্রি বা কেনা যে কত কঠিন সংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না। সরকারি রেজিস্ট্রি ফি’র বাইরেও কত টাকা দিতে হয় তার হিসাব নেই। ইশারা ছাড়া ইচ্ছে করলেই জমির মালিক জমি বিক্রি করতে পারেন না। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থানীয় নেতা হাজী ওমর শাহ নেওয়াজ, আব্দুল মান্নান রতন, ইশা খান, যুবদলের মোকাররম হোসেন সাজ্জাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল রানা, মহিলা দলের নার্গিস হক, ছাত্রদলের পাভেল মোল্লা প্রমুখ।