নতুন শিক্ষার্থীদের রক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে

0

আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ছাত্রদের সংগঠন ‘ম্যাট’ ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ম্যাট)’ এ অভিযোগ করছে। অভিযোগের তীর সেই ছাত্রলীগের দিকেই। এটা অবশ্যই একটি দুঃখজনক খবর। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেধা ও মননের চর্চা হবে, সবচেয়ে পরিশীলিত আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে শিক্ষার্থীরা, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? এক ছাত্র আরেক ছাত্রের ওপর নির্যাতন করছে। সংঘবদ্ধ নির্যাতনে সহপাঠীকে হত্যা পর্যন্ত করছে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র‌্যাগিংয়ের নামে চলছে শিক্ষার্থী নির্যাতন। নতুন শিক্ষার্থীরা তাঁদের হলজীবনের শুরুতেই রীতিমতো উদ্বিগ্ন। সিনিয়রদের নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুর খবর তাদের উদ্বেগের কারণ। একই কারণে অভিভাবকরাও উৎকন্ঠায় থাকেন। হলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ না মানলেই নির্যাতিত হতে হয়। তাঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় গেস্টরুমে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেস্টরুম কালচার এখন পরিচিত শব্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তাঁদের নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের দিকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল প্রশাসন নয়, বরং রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন আবাসিক হলগুলো। নবীন শিক্ষার্থীদের হলে থাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশ মানতে হয়। বেশির ভাগ সময়ই হল প্রশাসনের কাছে অভিযোগ আসে না। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একবার অভিযোগ দিলে পরবর্তী সময়ে তাঁকে আরো বেশি অপদস্থ হতে হবে, আরো সমস্যায় পড়তে হবে। আবরারদের পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সংগঠন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আবাসিক হলে গত পাঁচ মাসে ১৮ জন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত। বেশির ভাগ ঘটনায়ই প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে, ছাত্রলীগ না করায় ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। দেড় দশক ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে এক ধরনের অরাজক অবস্থা। আর এতে মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে সময়ের নষ্ট রাজনীতি। ছাত্রসংগঠনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁরা প্রকৃত অর্থে কিছু ক্যাডার লালন-পালন করছেন। হেন অপকর্ম নেই যা তাঁরা করছেন না। সরকার দলীয় রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাঁদের যথাযথভাবে বিচারের মুখোমুখিও করা যায় না। ক্ষমতাসীন দলে থাকায় তাঁরা ধরাকে সরাজ্ঞান করেন। বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সুস্থ ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে এই জঘন্য প্রথা বন্ধ হওয়া উচিত। সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে সহজেই এটা বন্ধ করা সম্ভব। আমরা আশা করবো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেবে।