যে কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলছে না ভারত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর পাঁচ দিনে পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক দেশই এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে পারমাণবিক অস্ত্র ক্ষমতাধর দেশ ভারত সযত্নে বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা করছে। ইউক্রেনে হামলার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) দিল্লি তার প্রথম বিবৃতিতে সরাসরি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেনি। তারা জানিয়েছে, কূটনীতি ও সংলাপের সুযোগ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে কর্ণপাত করা হয়নি বলে তারা দুঃখ পেয়েছে। তবে মস্কোর সমালোচনা বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি। অবশ্য ইউক্রেনে হামলার নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের একটি খসড়া প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার আগে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনকে ‘সঠিক কাজটি করার’ আহ্বান জানিয়েছে ভারত। দিল্লিকে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা প্রস্তাবে ভারত ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। তবে দিল্লির বিবৃতিটি যত্ন সহকারে পড়লে বোঝা যায় যে, তারা এক ধাপ এগিয়েছে এবং পরোক্ষভাবে মস্কোকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানোর অনুরোধ করেছে।
ভারত তার বিবৃতিতে ‘জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা’ জানানোর গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেছে। দিল্লি বলেছে,‘সব সদস্য রাষ্ট্রকে একটি গঠনমূলক পথ খুঁজে বের করার জন্য এই নীতিগুলিকে শ্রদ্ধা করতে হবে।’ কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভারতের ভোট দানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে পশ্চিমাদের ভাষ্য হচ্ছে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির অবস্থান আরও স্পষ্ট করা উচিত ছিল। এ ব্যাপারে ভারতের সাবেক কূটনীতিক জেএন মিশ্র বলেছেন, ভারতকে ‘খারাপ ও বেশি খারাপের মধ্যকার বিকল্পকে বেছে নেওয়ার’ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কেউ একই সময়ে উভয় দিকে হেলতে পারে না। ভারত কোনো দেশের নাম বলেনি, যাতে দেখা যাচ্ছে, এটি মস্কোর বিরুদ্ধে যাবে না। ভারতকে একটি পক্ষ বাছাই করতে কৌশলী হতে হয়েছিল এবং তারা সেটি করেছে।’ ইউক্রেন ইস্যুতে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায়ের পেছনে ভারতের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাশিয়ার সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক। ভারতের সবচেয়ে বড় সমরাস্ত্র সরবরাহকারী হচ্ছে রাশিয়া। অবশ্য বিভিন্ন সরবারাহকারী বেছে নেওয়া এবং দেশীয় সমরাস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোয় গত কয়েক বছরে রাশিয়া থেকে ভারতের অস্ত্র সরবরাহের পরিমাণ ৭০ শতাংশ থেকে কমে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এরপরও রাশিয়াই সবচেয়ে বড় সমরাস্ত্র সরবরাহকারী।
ভারতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ সরবরাহ করছে রাশিয়া। এর বদৌলতে চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কৌশলগত প্রতিরক্ষা সুবিধা পেয়েছে দিল্লি। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে ভারত। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ কূটনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। অতীতে কাশ্মির ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনা হলে তাতে ভেটো দিয়েছিল রাশিয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারত নিরপেক্ষ থাকার কৌশল অনুসরণ করছে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপের কথা বলছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ভারতের অবস্থান বিস্ময়কর নয়। কারণ এটি তার অতীত কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, দিল্লি ‘ইউক্রেনে যা ঘটছে তাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। তবে এর পরও দেশটির অবস্থান পরিবর্তন করার সম্ভাবনা নেই।’ কুগেলম্যান বলেন ‘প্রতিরক্ষা ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে এই মুহূর্তে দেশটি এই ঝুঁকি নিতে চাইছে না।’