কলাগাছের আঁশ দিয়ে সুতা

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহে কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন দুই উদ্যোক্তা। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নের মান্দারবাড়িয়া গ্রামের এলাহী বিশ্বাসের ছেলে ওসমান বিশ্বাসের বাড়িতে পোশাক ব্যবসায়ী একেএম শাহেদুল হক শাহেদ ও দুবাই ফেরত ওসমান বিশ্বাস যৌথভাবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ঝিনাইদহের ব্র্যান্ডিং পণ্য হচ্ছে কলা। কলা উৎপাদনের পর কলাগাছ পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকি সব ফেলে দেয়া হয়। সেই ফেলে দেওয়া কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এই খাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। যেখানে কলা উৎপাদনের পর গাছ পরিষ্কারের জন্য বাড়তি খরচ হয়, সেখানে শাহেদ ও ওসমান ক্ষেত থেকে কলাগাছ সংগ্রহ করে চাষিদের উপকারই করছেন। শাহেদ ও ওসমান ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থানীয় ওয়ার্কশপ থেকে কলাগাছের বাকল থেতলে আঁশ সংগ্রহের মেশিন বানিয়ে নিয়েছেন। বৈদ্যুতিক মটরে চলছে সেই মেশিন। তিন নারী শ্রমিক সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এখানে কাজ করছেন। ৪ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, নারী শ্রমিক অর্চনা দাস (৪০) কলাগাছ থেকে বাকল ছড়াচ্ছেন, আর আমেনা খাতুন (৬২) সেই বাকল মেশিনে থেতলে আঁশ বের করছেন। অপর শ্রমিক চায়না দাস নামের আরেক নারী শ্রমিক সেই বাকল পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। এই অবস্থায় সুতা বিক্রি করলে ১৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি মূল্যে এদেশের বিভিন্ন হ্যান্ডিক্রাফট কোম্পানি কিনে নিচ্ছেন। শাহেদ-ওসমান এই প্রকল্পে মেশিন তৈরিতে ৮০ হাজার, শেড তৈরি, মটর স্থাপন ও শ্রমিক মজুরি দিয়ে মোট ৪ লাখের মত বিনিয়োগ করেছেন। তারা এখন ভাবছেন মোল্ডিং মেশিনের মাধ্যমে সুতা তৈরি করে বিদেশে বিক্রি করতে। এই প্রক্রিয়ায় যেতে তাদের প্রকল্পে ৫০ লাখ টাকার মত বিনিয়োগ করতে হবে। উদ্যোক্তা শাহেদুল হক শাহেদ জানান, ‘এই আঁশ খুব উন্নতমানের ও প্রাকৃতিক। ব্যাগ, জুতা, শোপিস পণ্য ও শাড়ি কাপড় তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে এই আঁশ ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা মোল্ডিং ও স্পিনিং মেশিন বসাতে পারলে সুতা উৎপাদনে যেতে পারবো। যেহেতু আমাদের জেলায় কলার চাষ বেশি হয় তাই কাঁচামাল অপ্রতুল। যুবসমাজ এই উদ্যোগ গ্রহণ করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে কলার আঁশের সুতার একটি বিশাল বাজার তোলা সম্ভব।’ ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম শাহীন জানান, ‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্পটি দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’