ডে-কেয়ার সেন্টারের বেজমেন্টে আটকে আছি:ইউক্রেন থেকে খালিদ হাসান

0

॥ সিরাজুস সালেকিন ॥
টাঙ্গাইলের খালিদ হাসান ইউক্রেনের কিয়েভে আছেন প্রায় ৪০ বছর। বতর্মানে সেই দেশের স্থায়ী নাগরিক। ব্যবসা করছেন দীর্ঘদিন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে তার ঘুম ভাঙে বিস্ফোরণের শব্দে। বিকট শব্দে তার ঘরের দরজা জানালা কেঁপে উঠছিল। পরে টেলিভিশনের খবরে জানতে পারেন রাশিয়া হামলা শুরু করেছে। তার বাসস্থান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি এয়ারপোর্টে হামলা হয়েছে। এয়ারপোর্টটি বন্ধ হয়ে গেছে। খালিদ হাসান জানান, বাংলাদেশিদের মধ্যে ইউক্রেনে যারা বৈধভাবে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন তাদের বেশিরভাগই কিয়েভ ছাড়ছেন না। সেখানে প্রায় ৫০০ জনের মতো বাংলাদেশি বাস করেন। গত কয়েকদিনে অনেকেই কিয়েভ ছেড়ে পশ্চিমাঞ্চলে চলে গেছেন। তিনি কিয়েভ শহরেই আছেন। যা কিছুই ঘটুক তিনি শহর ছাড়ছেন না। অন্যদের ভাগ্যে যা আছে তিনিও সেটা বরণ করে নিতে প্রস্তুত। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে যখন খালিদ হাসানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হচ্ছিল সেই মুহূর্তে তিনি একটি ডে-কেয়ার সেন্টারের বেজমেন্টে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া কন্যা ছিল। খালিদ জানান, তার এক ইউক্রেনিয়ান বন্ধুর স্ত্রী ডে-কেয়ার সেন্টারের কর্মকর্তা। সেই সুবাদে তিনি সেখানে আশ্রয় পেয়েছেন। বৃহস্পতিবারের রাতটি সেখানেই কাটাতে হবে তাকে। আরও দু’টি বাংলাদেশি পরিবার তার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করবে। যদিও সেখানে তাদের চেয়ারে বসেই রাত পার করতে হবে। খালিদ হাসানের ধারণা, রাতে হামলা হলে খুব মারাত্মক পরিস্থিতি হতে পারে। রাশিয়ার টার্গেট বর্তমানে ইউক্রেনের অস্ত্রাগার ও সামরিক স্থাপনাগুলো। যে কারণে বেসামরিক নাগরিকদের খুব একটা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই মনে করেন তিনি। তার পরও মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। আকাশপথ বন্ধ থাকায় মানুষ প্রাইভেট গাড়ি, বাস ও ট্রেনে করে শহর ছাড়ছেন।
আরেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মাহবুব আলম ১৯৮২ সাল থেকে কিয়েভে আছেন। হোয়াটসঅ্যাপে তিনি বলেন, অনেকেই কিয়েভ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার কিয়েভ ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। মাহবুব আলমের সঙ্গে যে সময় কথা হচ্ছিল ওই সময় তার বাসার ওপর দিয়ে একটি ফাইটার প্লেন অতিক্রম করছিল। ওই সময় তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে আবার ফোন করা হলে তিনি বলেন, ওই ফাইটার প্লেনটি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর। ঘণ্টা দুয়েক আগে পার্শ্ববর্তী কোথাও বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু তিনি জানতে পারেননি। সরকার দেশে যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করেছে। তবে মানুষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। রাজশাহীর বাসিন্দা মাহবুব আলম বলেন, তিনি কিয়েভে থেকে ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন মেশিনপত্র বিক্রি করেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ব্যবসার ভবিষ্যৎ কী হবে তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। আপাতত তিনি কিয়েভেই থাকছেন জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
ইউক্রেনের খারকিভে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বাংলাদেশি চিকিৎসক খালেদা নাসরিন নীলিমা। গতকাল ভোরে যখন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে তখন আক্রান্ত এলাকায় ছিলেন ডা. নীলিমা। তিনি তার সন্তানকে নিয়ে পশ্চিম ইউক্রেনের এক আত্মীয়ের বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন বৃহস্পতিবার। সকালে ট্রেন ধরার সময় রুশ হামলা শুরু হয়। তিনি বলেন, ট্রেন থেকে আমরা যুদ্ধবিমান উড়তে দেখেছি একেবারে কাছ থেকে। এখানে হামলা হয়েছে সেনা ছাউনি ও সামরিক বিমান ঘাঁটিতে। নিজে খারকিভ শহর ছাড়লেও তার স্বামী সেখানে রয়ে গেছেন। জরুরি কাগজপত্র নিয়ে তিনিও পরে নিরাপদ স্থানে সরে পড়বেন। ডা. নীলিমা বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে আধ ঘণ্টা সময় ধরে তারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এই সময়ই সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা হয়েছে। খারকিভ শহর রাশিয়া সীমান্তের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে। এটি পূর্ব ইউক্রেনের একটি শহর। ডা. নীলিমা ট্রেন ভ্রমণে থাকায় বারবার তার টেলিফোন লাইনটি কেটে যাচ্ছিল। তিনি উদ্বেগের কণ্ঠে বলেন, ভয়ের মধ্যে আছি। খারকিভে যারা আছে তারা নিরাপদে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশি যারা আছেন তারাও চেষ্টা করছেন সরে যাওয়ার। অনেকে পশ্চিম ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ পোলান্ডে যেতে পারেন। ডা. নীলিমার স্বামীও একজন বাংলাদেশি। ইউক্রেনে পড়াশোনা শেষে তিনি সেখানে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।