হেলে পড়েছে নির্মাণাধীন ৪তলা ভবন, তবুও চলছে কাজ!

0

ডুমুরিয়া (খুলনা) সংবাদদাতা॥ খুলনার ডুমুরিয়ায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৪তলা ভবন মাটিতে দেবে গেছে। এতে অবশ্য থেমে নেই নির্মাণ কাজ। তড়িঘড়ি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ঠিকাদার। তাদের মতে এই হেলানোতে কারো কোনো সমস্যা হবে না। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার আগেই দেবে ও হেলে গেছে। এরপরও ঠিকাদার এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ওই এলাকায় সদ্য নির্মিত পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় ও পল্লীশ্রী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনও কিছুটা দেবে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় থেকে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার ৯০৭ টাকা ব্যয়ে ৪তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের অধীনে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদতর এটি বাস্তবায়ন করছে।
খুলনার দৌলতপুরের এম/এস রৈতি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ১৮ মাসে কাজ সমাপ্ত করার সময় বেধে দিয়ে ৮ এপ্রিল২০১৯ তারিখে কার্যাদেশ দেয়া হয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত ভবনের ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে নির্মাণাধীন ভবনের পিছনের (উত্তর) পাশ দেবে গিয়ে কিছুটা হেলে পড়লেও কাজ অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিকরা। বিদ্যালয়ের আশেপাশের বাসিন্দা বৃদ্ধা আজিরুন বেগম, সুমন মন্ডলসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুল আঙিনার উত্তর পাশে বড় ধরণের জলাশয় (পুকুর) ছিল, যেখানে মাছ চাষ হতো। বছর পাঁচেক আগে জলাশয়টি বালি দিয়ে ভরাট করা হয়। প্রথমে পিলার (পাইলিং) করার সময় তখন তা হেলে পড়েছিল। যারা কাজ করছিলেন তারা কাজ বাদ রেখে চলে যান। পরে আবার বালি দিয়ে কাজ শুরু করলে পুরো ভবনটি মাটিতে দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবব্রত সরদার ও মৃণাল কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘ভবনটি উত্তর দিকে দুই ফুটের মত হেলে পড়েছে। পরে চারতলা করার সময় পেছন দিকে একটু গাঁথুনি বাড়িয়ে সমান করেছে, তবে ফ্লোরগুলো এখনো ডাউন এভাবে থাকলে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হবে।’ এ ব্যাপারে পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাষ মণ্ডল বলেন, ভবন নির্মাণের শুরুতে পাইলিং করার সময় পিলার দেবে গেলে তা তুলে আবারও পাইলিং করা হয়। তারপরও ৬ ইঞ্চির মতো দেবে যাওয়ায় ভবনটি হেলে পড়ে। এরপর আর কোনো সমস্যা হয়নি, ভবন সামনের দিকে একটু এগিয়ে করা যেত কিন্তু বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে করা যায়নি। প্রকৌশলীরা বলেছে এতটুকু সমস্যায় কিছুই হবে না, তবে ভবনের ডিজাইনে ত্রুটি আছে বলে মনে করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরদার বলেন, ‘ভবনটি ব্যবহারে কিছুটা ঝুঁকি রয়েই যাবে, কারণ ভবন নির্মাণের পর এমনিতেই কম বেশি দেবে যায় এ ভবন তো কাজ শেষের আগেই দেবে গেছে। তিনি আরো জানান, একই প্রকল্পের আওতায় গত দুই বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় ও পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের পূর্ব পাশ প্রায় ৬ ইঞ্চির মত করে দেবে গেছে। ওই এলাকার মাটির গুণাগুনের সাথে সমন্বয় রেখে ভবনের নকশা তৈরি না হওয়ায় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। কাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার টিপু হাওলাদার দাবি করেন, নির্ধারিত স্থানে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবন করতে দেয়নি। তাদের কারণেই ভরাট করা ডোবার উপর কাজ করতে হয়েছে। কাজ করার সময় পেছন পাশটা একটু হেলে যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের দেখানো হলে তারা সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরের একজন অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ভবনের নকশা নির্ধারিত স্থানের মাটি পরীক্ষা এবং পাইলিং এর কে.নো কারিগরী ত্রুটি জনিত কারণে ভবন দেবে গিয়ে থাকতে পারে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খবর নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিপূর্বে ডুমুরিয়া উপজেলায় নির্মানাধীন চটচটিয়া শিবনগর ব্রীজের পিলার দেবে যায়।