এলএনজি আমদানির জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এর চাহিদা বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী এলএনজি’র দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও তার প্রভাব পড়েছে। ফলে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানিতে সরকারের ভর্তুকির চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলা থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে এলএনজি আমদানির জন্য ৩২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়,গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে কিন্তু মজুদ বাড়ছে না। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় গ্যাসের বিদ্যমান মজুদও ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চাহিদা মেটাতে উচ্চমূল্যের জ্বালানি এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে গ্যাসের গড় দাম। বেশি দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি করায় ভর্তুকি বেড়ে যাচ্ছে। এ ভর্তুকি কমাতে হলে গ্যাসের দাম বিদ্যমান দামের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়াতে হবে। সামনে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে দেশ পুরোপুরি উচ্চমূল্যের জ্বালানি নির্ভর হয়ে পড়বে
সূত্র আরো জানায়, এতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এলএনজি’র দাম বেড়ে যাবে। বাড়বে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। ফলে দেশের শিল্প খাত অচলাবস্থায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। ২০০৯ সাল থেকে আবাসিক ও শিল্পে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এর পরেও গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে গ্যাসের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি ছিল ৫০ কোটি ঘনফুট। এখন সরকারি হিসাবেই এ ঘাটতি ১০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন এ ঘাটতি আরো বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু গ্যাস উৎপাদন বাড়োনার জন্য গত ১০ বছরে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন সময় কিছু কর্মসূচি নেওয়া হলেও তা বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। এরপর বাপেক্সকে দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করানো হয়। তবে তা বাস্তবায়ন পর্যায়ে যাওয়ার আগেই সেই পরিকল্পনার ভিত্তিতে দুই বছরের জন্য ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাাম’ ধরনের কার্যক্রম নেওয়া হয়। ওই কর্মসূচিও তেমন বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
এ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দর বাড়ায় বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। বলা হচ্ছে, এলএনজি আমদানিতে বিপুল ভর্তুকির প্রয়োজন; কিন্তু চাহিদামাফিক অর্থ পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এ জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়াতে প্রতি এমএম বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজি ৪৫ ডলারেও কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী কাতার এবং ওমান থেকে যে এলএনজি আমদানি হচ্ছে সেখানেও তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। ফলে এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে না পেরে সরকারের কাছে ভর্তুকি চাওয়া হচ্ছে।
একই সঙ্গে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবাসিকে দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলা সাড়ে ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিল্পসহ সবশ্রেণীর গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের দাম সমন্বয়ের জন্য গণশুনানির দিন ধার্য করেছে। আগামী ২১ মার্চ থেকে চার দিনব্যাপী এই শুনানি হতে যাচ্ছে।
দেশে এখন দু’টি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে, যার মাধ্যমে দিনে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ সম্ভব। তবে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি যান্ত্রিক কারণে বন্ধ থাকাতে এলএনজির সরবরাহ এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। সম্প্রতি ৫৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। অবশ্য স্বল্প সময়ের মধ্যে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি সচল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে দেশে এলএনজি আমদানি বাড়াতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মার্চ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। এক দিকে গ্রীষ্ম, অন্য দিকে সেচ। এতে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেলে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। ফলে দাম যতই হোক, আমদানি করতেই হবে। পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান মতে, এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন ২২৫ কোটি ২০ লাখ ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট। গ্রীষ্মকে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে হলে এই সরবরাহ অন্তত ৫০ কোটি ঘনফুট বাড়াতে হবে।
এ ছাড়া সার উৎপাদনে দিনে ৩১ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ১৫ কোটি ঘনফুট। গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ চাহিদা সামাল দিতে সরকার সাধারণত সার কারখানা বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করে। এবারো সেই পথ অনুসরন করা হলে বাড়তি আরো ৩৫ কোটি ঘনফুট এলএনজির সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ কারণে ৩২ হাজার ২১৯ কোটি টাকার মোটা অঙ্কের চাহিদা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এভাবেই ভর্তুকির চাপ বেড়ে যাবে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।