যশোর হাউজিং এস্টেট কর্মকর্তা তুহিনের বিরুদ্ধে উৎকোচ না পেলে ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর হাউজিং এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইমদাদুল ইসলাম তুহিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি টাকা ছাড়া কাজ করেন না। কর্মপ্রত্যাশী মানুষকে জিম্মি করে তিনি মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে ভুক্তভোগীরা এ মর্মে অভিযোগও করেছেন। ইমাদুল ইসলাম তুহিন, ২০১৫ সাল থেকে হাউজিং এস্টেট যশোরে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সুযোগ বুঝে ইমাদুল ইসলাম ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কাছে উৎকোচ দাবি করেন। তার দপ্তরে কোনো কাজে গেলে তিনি সেবা গ্রহীতার কাছে মোটা অংকের অর্থ চেয়ে বসেন। না দিলে ফাইল আটকে রেখে ঘোরাতে থাকেন। এমনকী, চাহিদামত টাকা না দিলে তিনি কাজ করে দেন না। ভুক্তভোগীরা তার এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন।
উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ডি-ব্লকের বাসিন্দা লেদু মিয়ার বাড়ির নক্সা ও বাড়ি বানানোর অনুমোদন পাশের জন্যে তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন। যার সর্বসাকূল্যে খরচ ৮ হাজার টাকা। একই কাজের জন্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। ইমাদুল ইসলাম তুহিন ডি-ব্লকের ১২৬ নাম্বার বাড়ির মালিক মাহমুদুল আলম নামপত্তন করতে গেলে তিনি তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। যার খরচ সর্বসাকূল্যে ৩০০০ থেকে ৩৯০০ টাকা। সি-ব্লকের এক বাসিন্দার কাছ থেকে একই কাজের জন্যে ২৩ হাজার টাকা নেন। আরবিনার কাছ থেকে ওয়ারেশ জারির নামে ২২ হাজার, একই কাজের জন্য ফারুকের স্ত্রীর কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন। সম্প্রতি বি ৬৪/১ নম্বর বাড়ির রেজিস্ট্রি অনুমতির আবেদন করতে গেলে ইমাদুল ইসলাম তুহিন বাড়ির মালিকের কাজে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। না দিলে তিনি ওই ফাইলে স্বাক্ষর করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর ভুক্তভোগী মালিক ইউপি সদস্য আবু সাইদুর রহমান সোহেলকে সাথে নিয়ে যান। তখন ইমাদুল ইসলাম তুহিন ওই সদস্যকে বলেন, ৫ লাখ টাকা না দিলে আমি ফাইলে স্বাক্ষর করবো না। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ইউপি সদস্য নিজেই বাদী হয়ে কোতয়ালি থানায় ইমাদুল ইসলাম তুহিনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা যায়, ফাইলটি স্বাক্ষরের জন্যে ইমাদুল ইসলাম তুহিন ১০ হাজার টাকা নেন। টাকা নিয়েও তিনি স্বাক্ষর না করে ঘোরাতে থাকেন। এরপর তিনি ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। ইউপি সদস্য আবু সাইদুর রহমান সোহেল চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটুকে সাথে নিয়ে গেলে ৫ লাখ টাকা না দিলে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়ে দেন। হাউজিং এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইমাদুল ইসলাম তুহিনের এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাজশাহী সার্কেল, নির্বাহী প্রকৌশলী খুলনা বিভাগ, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, যশোর উপ-বিভাগ, কোতয়ালি থানাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্ততরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু বলেন, তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে অর্থগ্রহণ, হয়রানিসহ সকল অভিযোগ সঠিক। ইউনিয়নের নাগরিকদের জিম্মি করে তিনি অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন। যতভাবে প্রতারিত করা যায়, তার সবটিই নাগরিকদের সাথে করে থাকেন। আমাদের প্রত্যাশা, তার অপসারণের মাধ্যমে ইউনিয়নের নাগরিকবৃন্দ জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাক। তবে ইমাদুল ইসলাম তুহিন তার বিরদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি ইতঃপূর্বে তাদের কাছে ভালো ছিলাম। এখন অপরাধী হয়ে গেছি। তাদের ইচ্ছামতো কাজ করে না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। তারা অনেক অসামঞ্জস্য কাজেও টাকার বিনিময় আমাকে দিয়ে করতে চায়। তাতে রাজি না হওয়ায় অভিযোগ করা হচ্ছে।’