জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারীদের শাস্তি হওয়া জরুরি

0

সুন্দরবন, পার্বত্য বনাঞ্চল ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বনসম্পদ যখন উজাড়ের সমূহ সঙ্কটে নিপতিত ও বিপদাপন্ন, তখন গাছপালা প্রকৃতি ও পরিবেশ সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল তথা সাফারি পার্ক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, চট্টগ্রামের ডুলাহাজরায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এসব স্থানে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মূল্যবান জীবজন্তু ও পশুপাখি এনে উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এর পাশাপাশি ব্যবস্থা রাখা হয় পর্যটন ও বিনোদনের। যাতে মানুষ মুক্ত পরিবেশে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে গাজীপুরের সাফারি পার্কে উপর্যুপরি ১১টি জেব্রার মৃত্যু এবং ১২ জানুয়ারি একটি বাঘের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তথ্য গোপন রাখায় এগুলোকে হত্যার অভিযোগ উঠে স্থানীয়ভাবে ও গণমাধ্যমে। ঘটনার সত্যাসত্য নির্ণয়ে গঠিত হয় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। ঘটনার পর সাফারি পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, এগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে- এটি ক্রিমিনাল অফেন্স। এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি হওয়া আবশ্যক। পার্কের প্রকল্প পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্বপদে বহাল রেখে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের অপসারণ করা হয়। সরকারের কাছে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ওই সংসদ সদস্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে ৭টি হাতি হত্যা করা হয়েছে কক্সবাজার ও ঝিনাইগাতীতে। এর জন্য অবশ্য কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছিল শাস্তির আওতায়।
সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রকৃতি, পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সুরক্ষায় বনের এবং সেই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোন দেশের পরিবেশ সুষ্ঠু, সুস্থ, সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য ভূখন্ডের আয়তন অনুপাতে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। বর্তমানে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ৭-৮ শতাংশ। পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য রীতিমতো যা হুমকিস্বরূপ। দেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ হেক্টর, যা মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১৫.৫৮ শতাংশ। গত ৫০ বছরে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে। এভাবে বন উজাড় ও বেদখল হতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরে বনভূমির পরিমাণ নেমে আসবে মাত্র পাঁচ শতাংশে। বন বিভাগের হিসাবে দেশের প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি রয়েছে অবৈধ দখলে। বনের জায়গা দখল ও উৎখাত করে নির্মিত হয়েছে শিল্প-কারখানা, ইটভাঁটি, পর্যটন কেন্দ্র, কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি। এসব নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এর পেছনে রয়েছে বন বিভাগের তদারকির অভাব, গাফিলতি, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ বন খেকোদের যোগসাজশ। দীর্ঘদিন এই অপকর্ম চললেও এতদিন বন বিভাগ থেকে প্রায় কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এর পাশাপাশি চোরা শিকারিদের বিষটোপ দিয়ে বা ফাঁদ পেতে বাঘ ও হরিণ শিকার তো চলছেই। এখন দেখা যাচ্ছে, দেশের সাফারি পার্কগুলোও নিরাপদ নয় মোটেও। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। আমরা আশা করবো, গাজীপুরের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শািস্ত নিশ্চিত করা হবে।