চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠেকাতে মামলা, সরঞ্জামাদি জব্দ

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠেকাতে এবার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি। রবিবার দুপুরে হাকিমপুর ইউনিয়ন ভূমিসহকারীকর্মকর্তা বাদী হয়ে তিন জনকে আসামী করে চৌগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। উপজেলারতাহেরপুরে কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তিস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার নেতৃত্বে এ অভিযানচালানো হয়। এ সময় কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে তোলা বালু, দুটি মেশিন, বেশ কয়েকটি পাইপ এবং নদেনামার ফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের সামু বিশ্বাসের ছেলে রওশন আলী (৫২), একই গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে রাশেদুল ইসলাম (৫৫) ও তজবিজপুর গ্রামের হিদা খার ছেলে মিজানুর রহমান (৫৫), চৌগাছা থানা মামলা নং ২২ তারিখ১৩-০২-২০২২ ইং। স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন যাবৎ কপোতাক্ষ নদের চৌগাছা অংশের অন্তত পাঁচটি স্থানে ২৫-৩০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছিল বালু খেকরা। চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা গ্রামের ইউপি সদস্য বায়েজিদ হোসেন গত ২ ফেব্রুয়ারি চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার দপ্তরে চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বালু উত্তোলনকারীদের মোবাইলে নিষেধ করেন। তবুও বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তুলে বিক্রি করে আসছিল অসাধু ব্যক্তিরা। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এক স্থানে বালু তুলতে বাঁধা দিলে সেখান থেকে মেশিন সরিয়েঅন্য স্থানে নিয়ে আবারো বালু উত্তোলন করছিল তারা। ফলে ব্যাপক হুমকির মুখে পড়ে কৃষি জমি। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি স্থল হাকিমপুরের তাহেরপুরে বালু খেকোরা পানিগ্রাম রিসোর্টের দক্ষিণ পাশে ও পানিগ্রাম রিসোর্টের ভিতরে, তাহেরপুর শ্মশানঘাটের পাশে ১০/১২ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলে স্তুপ করে রেখেছেন। একটু পাশেই আরো কয়েকটি স্থানে মেশিন বসানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদের পাশে কৃষি জমির মালিকরা অনেকে বলেন, যারা বালু তুলছে তারা সবাই সরকারি দলের প্রভাবশারীদের লোক তাই আমাদের কিছুই বলার নেই।
স্থানীয়রা জানান, যারা বালু তুলছে তাদেরকে ওই গ্রামের ইউপি সদস্য স্বাধীন কয়েকদিন আগে নদ থেকে বালু তুলতে নিষেধ করলেও বন্ধ হয়নি। এছাড়াও নারায়নপুরের পেটভরা, চৌগাছা পৌরসভার শ্মশান ঘাট, চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা ও বেড়গবিন্দপুরসহ সাতটি স্থানে ২৫ থেকে ৩০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছিল তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর নড়ে বসেন প্রশাসন। অভিযোগের পর ৯ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার নেতৃত্বে উপজেলার তাহেরপুরে এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে তোলা বালু, দুটি ড্রেজার মেশিন, বেশ কয়েকটি পাইপ এবং নদে নামার ফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। হাকিমপুর ইউনিয়ন ভূমিসহকারী কর্মকর্তা দলীল উদ্দীন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিন জনকে আসামী করে চৌগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত দুটি মেশিন, কয়েকটি পাইপ, নদে নামার ফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোল কারীদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তাদেরকে আটক করতে অভিযান চলছে। চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে তাহেরপুরে এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত দুটি মেশিন, কয়েকটি পাইপ, নদে নামার ফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।