বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুতের ঝলকানি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রপাতের সাক্ষী থাকলো তিনটি মার্কিন রাজ্য। বিদ্যুতের তীব্র ঝলকানি যা প্রায় ৫০০ মাইল এলাকাজুড়ে প্রসারিত ছিল। এই বজ্রপাতের দূরত্ব এবং সময়কাল উভয় ক্ষেত্রই – মহাকাশ থেকে পরিমাপ করা হয়েছে, তারপরেই একে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুতের ঝলকানির তকমা দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ফ্ল্যাশ হয়েছিল এবং এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৭৬৮ কিলোমিটার, সোজা কথায় বললে লন্ডন থেকে জার্মানির হামবুর্গের দূরত্ব যতটা ঠিক ততটা জুড়ে প্রসারিত ছিল এই বিদ্যুতের ঝলকানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, লুইসিয়ানা এবং মিসিসিপি— এই তিন রাজ্যজুড়ে সেই সময়ে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা গিয়েছিল। এই তথ্য প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন। তারও আগে ২০১৮ সালে ব্রাজিলে একটি বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা গিয়েছিল যা ৪৪০.৬ মাইল অর্থাৎ প্রায় ৭০৯ কিলোমিটার লম্বা। তবে তাকে ছাপিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড।
দ্বিতীয় ফ্ল্যাশটি ২০২০ সালের জুন মাসে পরিমাপ করা হয়েছিল৷ এটি উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা সীমান্তে স্ট্র্যাডল এলাকায় দেখা গিয়েছিল এবং ১৭ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। তার আগের রেকর্ড ছিল ১৬.৭ সেকেন্ডের। অর্থাৎ শুধুমাত্র বিদ্যুতের ঝলকানির বিস্তার নয়, কতক্ষণ তা স্থায়ী হয়েছে তার ভিত্তিতেও রেকর্ড তৈরি হয়। সাধারণত লাইটেনিং বা বিদ্যুতের ঝলকানি ১০ মাইলের বেশি প্রসারিত হয় না। আর স্থায়িত্ব হয় এক সেকেন্ডেরও কম সময়। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির Randall Cerveny এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে , ”এটি জানা বিজ্ঞানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বজ্রপাতের গতিশীলতা থেকে জানতে পারা যায় বজ্রপাত কীভাবে, কোথায় ঘটবে।” উত্তর আমেরিকার গ্রেট প্লেইনস এবং দক্ষিণ আমেরিকার রিও দে লা প্লাটা বেসিনকে যথাক্রমে বজ্রপাতের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চরম বজ্রপাতের জন্য কোনো এলাকার ভৌগোলিক পরিবেশ দায়ী । দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া বিদ্যুতের ঝলকানিকে পরিমাপ করা স্থল-ভিত্তিক কোনো সরঞ্জাম দিয়ে বেশ কঠিন ছিল, তাই আবহাওয়াবিদরা জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটগুলির মাধ্যমে বজ্রপাতের পরিমাপের সিদ্ধান্ত নেন। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির Randall Cerveny জানাচ্ছেন , “আমাদের হাতে এই ধরনের বাজ-শনাক্তকরণ এবং ম্যাপিং সরঞ্জামগুলি শুধুমাত্র কয়েক বছর ধরে আছে এবং এর মাধ্যমে, আমরা মেগা-ফ্ল্যাশ সম্পর্কে আরও অনেক কিছু শিখছি। ”সম্প্রতি যে দুটো বিদ্যুতের ঝলকানির কথা প্রকাশ্যে এসেছে, সেগুলি যে সাধারণ বিদ্যুতের ঝলকানির তুলনায় বেশ কিছুটা আলাদা, সেকথা জানিয়েছেন Cerveny। তবে এই দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হওয়া এবং সুবিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা গেলেও এর থেকে কারও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কারণ ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে মেঘের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুতের ঝলকানির বিস্তার হয়েছে মেঘের মধ্যেই। তাই কোনও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়নি। যুক্তরাজ্যের মেট অফিসের গ্রায়েম মার্ল্টনের মতে, বজ্রপাতের মতো ঘটনা রেকর্ড করার আগে বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল থেকে ডবল-চেকিং , ক্রস-চেকিং পর্যবেক্ষণ এবং যাচাইকরণের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে , তবেই এই ঝলকানিকে বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে । Cerveny বলেছেন, দৈর্ঘ্য এবং সময়কাল এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা থেকে অনুধাবন করা যায় যে বজ্রপাত তার মূল অঞ্চল থেকে কতদূর আঘাত করতে পারে। যে কোনো সময় বজ্রপাতের শব্দ শুনলে তৎক্ষণাৎ বজ্র-নিরাপদ কোনো স্থান বা সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ কোনো ধাতব গাড়ির মধ্যে আশ্রয় নেবার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।