রাশিয়া-ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র: যুদ্ধ আসলে চায় কে?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্ব অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব। পশ্চিমাদের দাবি, রাশিয়া যেকোনো সময় ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। এ সংঘাত ঠেকাতে এরই মধ্যে পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে ন্যাটো সদস্যরা। ইউক্রেন সীমান্তে আনাগোনা বেড়েছে রুশ সেনাদের। অস্ত্র হাতে প্রস্তুত হচ্ছে ইউক্রেনের সাধারণত মানুষও। ফলে গোটা বিশ্বের নজর এখন সাবেক সোভিয়েত দেশটিতে। মস্কোর দাবি স্পষ্ট, ওয়ারশ চুক্তির আগে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিত যেমন ছিল সে অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। রুশ সীমান্তে আক্রমণাত্মক অস্ত্র মোতায়েন না করা যাবে না। ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদানের পথ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। তবে রাশিয়ার এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্রেমলিনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর জবাবে রাশিয়ার প্রধান উদ্বেগকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুতিন
আলাপ প্রসঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি আর খারাপের দিকে নিতে চান না। মস্কো যুদ্ধ চায় না। এ কথা অবশ্য রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরভ আগেই বলেছেন। তার কথা হলো, রাশিয়া যুদ্ধ চায় না, তবে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে তৈরি। তবে মস্কোর এসব কথায় ভরসা রাখতে পারছে না পশ্চিমারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। পুতিন-ম্যাক্রোঁ ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসময় তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসেই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। এরপর বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতি শক্তিশালী করতে আরও সেনা পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিম ইউরোপে এরই মধ্যে হাজার হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে দাবিতে গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকেই। ইউক্রেন ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডেকেছে ওয়াশিংটন। আগামী সোমবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কর্মীদের পরিবারকে ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দেয় মার্কিন প্রশাসন। এমনকি, ইউক্রেন আক্রমণ করলে পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বাইডেন নিজেই। তবে এতেও কোনো নড়চড় নেই রাশিয়ার। তারা পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা দিলে উচিত জবাব দেবে মস্কো। ইউক্রেন ইস্যুতে কোনো ছাড় নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে যতটা লম্ফঝম্ফ করতে দেখা যাচ্ছে, সেই তুলনায় তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা অনেকটাই হিসেবী। জার্মানি হুমকি দিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে ইউরোপ। পিছিয়ে যেতে পারে নর্ড স্ট্রিম–২ পাইপলাইনের কাজ।
তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। জ্বালানির জন্য ইউরোপ অনেকটাই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে, তার ৪১ শতাংশের বেশি পায় রাশিয়ার কাছ থেকে। একই দৃশ্য অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রেও। এক রাশিয়া থেকেই ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ গ্যাস আমদানি করে ইউরোপ। ফলে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে ইউরোপীয় দেশগুলোতে। ঘাটতির পাশাপাশি সেখানে জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে সামরিক পদক্ষেপের চেয়ে কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানে ইউরোপের আগ্রহ বেশি। এখানে পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের অবস্থানের পার্থক্য সুস্পষ্ট। এমনকি, যুদ্ধ এড়াতে সচেষ্ট ভুক্তভোগী দেশ ইউক্রেনও। দেশটির প্রেসিডেন্ট বরং আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছেন। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আমরা আতঙ্ক চাই না। লড়াইয়ের বদলে ইউক্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনাদের সামরিক মহড়া প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্য, গত বসন্তেও সীমান্তে একই ধরনের সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল রাশিয়া। তাই এবারের সেনা মোতায়েনে আগের চেয়ে বড় কোনো হুমকি নয়। তার মতে, ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো, দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা।