ঝিকরগাছা পৌরসভা নির্বাচন: ২১ বছর চেয়ারে থাকা আনোয়ার পাশাই ফের মেয়র

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ দীর্ঘ ২১ বছর পর অনুষ্ঠিত যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভা নির্বাচনে ফের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। তিনি ১২শ’ ৪৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল ভোট গ্রহণ শেষে রাতে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রাপ্ত ফলাফল মতে, নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ৩শ’ ৭৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান হাসান সামাদ নিপুন কম্পিউটার প্রতীকে ৬ হাজার ১শ’ ২৬ ভোট পেয়েছেন।

আর জগ প্রতীকে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক (বহিস্কৃত) সেলিমুল হক সালাম ১৯ শ’, আব্দুল্লাহ আল সাঈদ রেলইঞ্জিন প্রতীকে ১ হাজার ১শ’ ৩০ ভোট, আমিনুল কাদির নারকেল গাছ প্রতীকে ১ হাজার ৩৫, ইমতিয়াজ আহমেদ শিপন মোবাইল ফোন প্রতীকে ৬২৪ ভোট ও জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ৩৩ ভোট পেয়েছেন। এদিকে সকাল আটটায় শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। সীমানা জটিলতার কারণে ২১ বছর এ পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ ছিল। এবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ায় পৌরসভা জুড়েই উৎসবের আমেজ ছিল। নির্বাচনে গতকাল প্রতিটি কেন্দ্রেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। তবে এতে বিড়ম্বনার শেষ ছিল না ভোটারদের। অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটারদের আঙুলের ছাপ মেলাতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়। আবার অনেককে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। রবিবার পৌরসভার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে পৌরসভার কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সম্মিলনী প্রাথমিক কেন্দ্রে দেখা যায় পুরুষ ও নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ওই দুই কেন্দ্রে যথাক্রমে পুরুষ ভোটার ১৬৪৮ ও নারী ভোটার ১৭৮৯ জন। ভোটারদের দীর্ঘ লাইন হলেও এক ঘন্টা ৩০ মিনিটে সেখানে ভোট দিয়েছেন পুরুষ ১৮০ ও নারী ১১৯ জন। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সাইদুজ্জামান বলেন, ইভিএমে এই প্রথম ভোট হওয়ায় ভোটাররা অনেকটা বুঝে উঠতে পারছেন না। যেকারণে ভোটগ্রহণে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটাররা ভোট দিতে সক্ষম হবেন বলে তিনি দাবি করেন। ওই কেন্দ্রে কথা হয় রোকেয়া বেগম নামে এক ভোটারের সাথে। তিনি বলেন, সকালে ভোট শুরুর আধা ঘণ্টা পর বুথে প্রবেশ করেও এখনও ভোট দিতে পারেননি। আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, যাদের বয়স একটু বেশি তাদের আঙুলের ছাপ মেলাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকের আঙুলের ছাপ একেবারেই মিলছে না। যেকারণে ভোট না দিয়ে চলে যাচ্ছেন তারা। একই কেন্দ্রে কথা হয়, শরিফা বেগম নামে আরেক ভোটারের সাথে। তিনি বলেন, ইভিএমেতো আর এর আগে কখনও ভোট দিইনি, তাই ভেতরের লোকজন যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছে সেইভাবে ভোট দিয়েছি। ইভিএমে ভোট এমন জটিল হবে আগে জানতেন না তিনি বলে জানান। সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটের দিকে পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কীর্তিপুর খাদেমুল ইনসান দাতব্য চিকিৎসালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক মহিলা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন বয়স্ক মহিলাকে লাইনের মাঝে বসে থাকতে দেখা যায়। রাবেয়া রেহেনা বেগম নামে এক ভোটার বলেন, এক ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু এখনও ভোট দিতে পারিনি, আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। ওই কেন্দ্রের বুথ থেকে বেরিয়ে আসা আলেয়া পারভীন বলেন, আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে চলে যাচ্ছেন। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, তার মায়ের বয়স ৫০-এর বেশি। কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে ভোট না দিয়ে চলে গেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই এমন সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান। কৃষ্ণনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সাজেদা বেগম জানান, আমার বিয়ে যে বার অর্থাৎ ২০০১ সালে ভোট হয়েছিলো। সেবার ভোটার না হওয়ায় ভোট দিতে পারেন তিনি। দীর্ঘদিন পর এবার ভোট দিতে এসেছি। এত বছর পর ভোট দিতে পেরে আনন্দ লাগছে। দুপুর ১২ টার দিকে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের পুরনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে পরিদর্শনে যান জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নিবাচনের সার্বিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। কোথাও কোনো অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো জটিলতা হয়নি। তবে কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে তারা ভোট দিতে পারছেন না এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, দুএকটি ঘটনা এমন হতে পারে তবে সার্বিক পর্যায়ে সবাই ইভিএমে উৎসব আমেজে ভোট দিচ্ছেন। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক জানান, দীর্ঘ বছর পর নির্বাচন হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৬৬ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৮ জন প্রতিদ্বিন্দ্বতা করেন। ১৪টি ভোটকেন্দ্রের ৮৬টি বুথে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৯ দশমিক ৪৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঝিকরগাছা পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ২ এপ্রিল। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। সীমানা জটিলতা কাটিয়ে ২১ বছর পরে পুরাতন সীমানায় নির্বাচনের জন্য গত ৩০ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়।